
দুরারোগ্য ও গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের হজে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সৌদি আরব। হজযাত্রী পাঠানো সব দেশকে প্রতিটি যাত্রীর পূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ‘স্বাস্থ্যঝুঁকিমুক্ত’ সনদ ইস্যুর নির্দেশ দিয়েছে দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। সোমবার বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় জানায়, সৌদি কর্তৃপক্ষ এ–সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক পত্র পাঠিয়েছে, যেখানে হজে অংশ নিতে না পারা রোগীদের একটি বিস্তৃত তালিকাও যুক্ত করা হয়েছে।
সৌদি নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব হজযাত্রীর প্রধান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কার্যকর নয় বা জীবনঘাতী জটিলতায় আছেন, তারা হজের অনুমতি পাবেন না। বিশেষভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ডায়ালাইসিস–নির্ভর কিডনি রোগী, গুরুতর হৃদরোগী, সার্বক্ষণিক অক্সিজেন প্রয়োজন এমন ফুসফুস রোগী ও ভয়াবহ লিভার সিরোসিস আক্রান্তদের। একইভাবে গুরুতর স্নায়বিক ব্যাধি, মানসিক রোগ, স্মৃতিভ্রষ্টতা, অতিবৃদ্ধ ও চলাফেরা অক্ষম ব্যক্তিদেরও হজের সুযোগ সীমিত করা হয়েছে। শেষ প্রান্তিকের গর্ভাবস্থা, যেকোনো স্তরের উচ্চঝুঁকির গর্ভাবস্থা, এবং সংক্রামক রোগ যেমন যক্ষ্মা বা ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বরেও হজযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেমোথেরাপি বা নিবিড় ইমিউনোথেরাপি নিচ্ছেন এমন ক্যান্সার রোগীরাও এ বিধিনিষেধের আওতায় পড়বেন।
সৌদি হজ মন্ত্রণালয় পাঠানো নির্দেশনায় যেসব স্বাস্থ্যগত অবস্থায় হজে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, তার বিস্তারিত তালিকা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
ডায়ালাইসিস-নির্ভর কিডনি রোগ
গুরুতর হৃদরোগ (অকার্যকর হৃদযন্ত্র)
অক্সিজেন-নির্ভর ফুসফুসের জটিলতা
ভয়াবহ লিভার সিরোসিস
গুরুতর স্নায়ুবিক ব্যাধি ও মানসিক রোগ
স্মৃতিভ্রষ্টতা বা ডিমেনশিয়া, অতি বয়স্ক অবস্থায় চলাচলে অক্ষমতা
শেষ প্রান্তিকের গর্ভাবস্থা ও যে কোনো উচ্চঝুঁকির গর্ভাবস্থা
সংক্রামক রোগ—যক্ষ্মা, ভাইরাল হেমোরেজিক ফিভার
কেমোথেরাপি বা নিবিড় ইমিউনোথেরাপি চলমান ক্যান্সার রোগী
হজযাত্রীর শারীরিক সক্ষমতা নিশ্চিত করতে নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে আপলোডযোগ্য বৈধ স্বাস্থ্য সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সৌদি মনিটরিং দল আগমন ও বহির্গমন প্রান্তে এসব সনদের সত্যতা যাচাই করবে। নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনো দেশের যাত্রীর মধ্যে তালিকাভুক্ত স্বাস্থ্যজটিলতা পাওয়া গেলে সে দেশের বিরুদ্ধে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলে হজযাত্রী যাচাই–বাছাইয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ওপর বিশেষ চাপ তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, নিরাপদ ও মসৃণ হজ ব্যবস্থাপনার জন্য শারীরিক সক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং সৌদি আরবের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করবে। তিনি বলেন, নিবন্ধন শুরুর আগেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তদের হজে নিবন্ধন না করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল এবং হজ এজেন্সিগুলোকে একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, সৌদি সরকারের আহ্বানে বাংলাদেশের দুই চিকিৎসক বর্তমানে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ও চিকিৎসাগত নির্দেশনা পর্যালোচনার জন্য একটি কর্মশালায় অংশ নিচ্ছেন।