
সৌদি আরব স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আগে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে হবে ১৯৬৭ সালের সীমানায় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে, এবং পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানি হিসেবে গৃহীত হতে হবে। তাদের এই অবস্থান সবসময় অটল এবং আপোষহীন বলে তারা দাবি করেছে।
সৌদি আরবের বিদেশ মন্ত্রণালয় পুনর্বার বলেছে যে, স্বাভাবিক কূটনীতি গড়ার শর্ত হিসেবে তারা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে প্রধান দৃষ্টিকোণ হিসাবে দেখছে। তাদের দাবি হলো — একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র যা ১৯৬৭ সালের সীমা অনুযায়ী গঠিত হবে, এবং পূর্ব জেরুজালেম হবে তার রাজধানি। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে না বলে কথা দিয়েছে সৌদি আরব। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের খুব কাছের এক লোক ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলকে সোমবার (১৭ নভেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা (সৌদি) আমাদের বলেছে তারা ফিলিস্তিনিকে ফেলে চলে যাবে না। এছাড়া ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের মাধ্যমেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকরণ হতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।’
সৌদির এই অবস্থান আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি তাদের আরও সুস্পষ্ট বার্তা দেয় যে তারা ফিলিস্তিনকে কেবলতম একটি ন্যূনতম দাবির অংশ হিসেবে দেখছে না, বরং এর পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তাদের শান্তি পরিকল্পনার ভিত্তি।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান, গত জুলাই ২০২৫-এ একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বলেছিলেন, “সৌদি আরবের জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণ কেবল তখনই সম্ভব, যদি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পায় এবং ফিলিস্তিনি জনগণের স্বনির্ধারণের বৈধ অধিকার মানা হয়।”
গাজায় চলমান সহিংসতা এবং মানুষের দুর্দশাকে তুলে ধরে, সৌদি মন্ত্রী বলেছে যে অবিলম্বে সিরিয়াস যুদ্ধবিরতি জরুরি, এবং ইসরায়েলকে গাজা থেকে সেনা সরে যেতে হবে।
অপরদিকে গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এ কর্মকর্তা বলেছেন, তারা হামাসের কোনো নিয়ন্ত্রণ মানবেন না। এজন্য ফিলিস্তিন অথরিটি বা আরব লীগের কাছে হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে। যদিও হামাস এটি প্রত্যাখ্যান করেছে।
একটি পুরাতন কিন্তু পুনরায় উচ্চারিত দৃষ্টিকোণ হলো — ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সময় বলেছে যে তাদের “দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান” ছাড়া দীর্ঘমেয়াদী শান্তি সম্ভব না।
সৌদির এই প্রস্তাব আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপে বড় প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে। তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংসদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরব এই অবস্থান কূটনীতিক কৌশল হিসেবেও ব্যবহার করছে — তারা শান্তি আলোচনায় তাদের শর্ত শক্তিশালী করে রাখছে, যাতে ভবিষ্যতে স্বাভাবিকীকরণ হলে তা ফিলিস্তিনের স্বার্থগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।