নোটিশ:
শিরোনামঃ
সীমান্তে উত্তেজনা: আখাউড়ায় বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক আহত ভারতের গৃহীত সিদ্ধান্তের জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া পাকিস্তানের বেরোবিতে অনুষ্ঠিত হলো গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা আধুনিক কৃষি: টেকসই কৃষি পদ্ধতিতে বাংলাদেশের কৃষির ভবিষ্যৎ সালাতুল ইস্তিসকার আয়োজন করলে চাপ আসত ভারত থেকে যেকোনো মুহূর্তে ভারতের হামলার আশঙ্কা, প্রস্তুত পাকিস্তান দাবানলে জ্বলছে ইসরায়েল, বন্ধ জেরুজালেমের পথ মৃত্যুর মুখে শৈশবের শিক্ষা: ‘কালেমা’ পাঠে বাঁচলেন অধ্যাপক ও পরিবার নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ইসি, কারো দিকে তাকিয়ে নয়: সিইসি ঐক্যের পথে শীর্ষ ইসলামী দলগুলো

রোহিঙ্গা নারীদের অবর্ণনীয় ট্র্যাজেডি ও আশার আলো

আরজু আহমেদ
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫
  • ২৪ বার দেখা হয়েছে
মিয়ানমারে ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীরা কি আগামী বছর তাদের দেশে ফিরতে পারবেন? ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারে ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীরা কি আগামী বছর তাদের দেশে ফিরতে পারবেন? ছবি: সংগৃহীত
১। চার সন্তানের জননী সুপ্রীতি, তিন সন্তান এবং স্বামীকে তার চোখের সামনে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেদিন তাকেও বন্দী করা হয় একটা ঘরে। আরও সাতজন নারীর সাথে তিনিও গণধর্ষণের স্বীকার হন।
ধর্ষণে বাঁধা দেওয়ার সময়- তার মাথায় বেয়নেট দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। সেই আঘাতের ফলে তিনি ঠিকভাবে হাঁটতে-চলতে পারেন না।
২। রাহেনা, মাত্র পনেরো বছরের একটা মেয়ে। দুপুরের খাবার বেড়ে দিচ্ছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকদের। সেনারা অকস্মাৎ গ্রামে ঢুকে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। মেয়েদেরকে মুখে স্কচটেপ প্যাঁচিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে।
এরপর একজন একজন করে প্রতিটা মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। বেশিরভাগ মেয়েই জ্ঞান হারায়। রাহেনাও তাদের একজন ছিলেন। জ্ঞান ফিরতেই বিধ্বস্ত দেহে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা করেন তিনি।
গণধর্ষণের শিকার রাহেনার ভাষ্যে, ‘আমার তখনও ভীষণ রক্তপাত হচ্ছিল। গ্রামটা পেরোতেই বালির উপর আমার স্বামীর লাশ দেখতে পাই।’
৩। সেদিন ছিল শুক্রবার সকাল, মানসীর গ্রাম সেনারা ঘিরে ফেলে। তার বাবা, তার স্বামী এবং চারবোন মিয়ানমারের সেনাদের হাতে হত্যার শিকার হয়েছে।
মানসীর ভাষ্যে, ‘ ছয়/সাত জন সৈন্য আমাদের ঘরে ঢুকে আমাকে ধর্ষণ করে। আমি অচেতন হয়ে পড়ি। প্রচুর লাশ পড়ে ছিল। অন্তত হাজারখানেক রোহিঙ্গা মুসলমানের লাশ।’
৪। ১৭ বছরের সামিরা। বিয়ের মাত্র তিন-চার মাস পর তার স্বামী মিয়ানমার সেনাদের হাতে হত্যার শিকার হয়। একদিন গ্রামে ঢুকে সৈন্যরা গ্রামের সব পুরুষকে হত্যা করে। স্বজনদের লাশ নিয়ে, অসহায় অবস্থায় সেখানেই পড়ে থাকে নারীরা।
‘এর দুদিন পর তিনজন সৈন্য আমার ঘরে আসে। আরও দুজন রোহিঙ্গা মেয়েকে সাথে এনেছিল ওরা।’
তিনজন মেয়েই সেদিন গণ ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল সেদিন।
৫। ১৮ বছরের হামিদা বেগম। বিয়ের মাত্র দুমাস পেরিয়েছে তখন। একদিন প্রায় মধ্যরাতে শয্যাপাশ থেকে তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায় সৈন্যরা। ভীত অবস্থায় স্বামীকে ফিরে পেতে আল্লাহ্‌র কাছে কান্নাকাটি করতে থাকেন তিনি।
রাত তিনটেয় বাইরে থেকে আওয়াজ শুনে ভেবেছিলেন, হয়ত তার স্বামী ফিরে এসেছে, কিন্তু নাহ! এসেছিল তিনজন সৈন্য। পালাক্রমে ভোর পর্যন্ত তাকে ধর্ষণ করে। প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়।
৬। ১৭ বছরের আরেফার সংসার ছিল মাত্র দেড় মাসের। তার স্বামী, যে ছিল তারচে’ মাত্র এক বছরের বড়ো- সে মিয়ানমার সৈন্যদের হাতে হত্যার শিকার হয়। স্বামীর লাশটা কোনও মতে দাফন করে বাংলাদেশে আসার সময় সে পথে আবারও ধর্ষিত হয়।
৭। ১৫ বছরের শফিকা, শিলপাটায় মরিচ বাটছিলেন। হঠাৎ চারদিক থেকে গুলির আওয়াজ। ভয়ে সে দরজা আটকে দিচ্ছিলেন, সেইসময় দুজন সৈন্য ঘরে ঢুকে তার মায়ের সামনে তাকে ধর্ষণ করে। সেদিন তার স্বামীও মারা গিয়েছিল।
৮। মরিয়াম, যিনি ১৬ বছরেই স্বামীহারা হয়েছেন। মরিয়মকে সৈন্যরা তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তাঁর ভাষ্যে,
‘সৈন্যদের দুজন ধরে রাখত। একজন ধর্ষণ করত। একজন থাকত পাহারায়।’
আরও দুজন মেয়েকে মরিয়মের সামনে ধর্ষণ করা হয়েছিল। একজনের জিহ্বাও কেটে নেওয়া হয়েছিল।
——
সিএনএনের ব্রায়ান সকল এর বরাতে এই গল্পগুলো আমরা জেনেছিলাম। এইরকম অসংখ্য ভয়ানক না বলা বাস্তব গল্প রয়েছে প্রতিটা রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ ও শিশুর।
এখানে যে ৮ জনের কথা বলা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই সেই ধর্ষণের কারণে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন নিজ গর্ভে সন্তান নিয়ে। এই মায়েরা শত্রুর সন্তান গুলোকেও হত্যা করার পথ বেছে নেন নি। এইরকম হাজার হাজার রোহিঙ্গা মা আছেন।
এ দেশে তারা এসে অধিক সন্তান জন্ম দিচ্ছেন- গণমাধ্যমের এইসব সংবাদ প্রচার হত। সে সূত্রে তাদের নিয়ে অগুনতি ট্রল ও বিদ্রূপ তখন দেখেছি। অথচ সেই প্রত্যেকটা সন্তান তাদের উপর হওয়া অবর্ণনীয় জুলুমের স্মারক।
এই লেখাটা আমি ৪ ই জুন ২০২০, এ লিখেছিলাম। সেই রোহিঙ্গাদের আজ আমরা আবার হাসতে দেখলাম। নিজেদের বোঝার মত আঞ্চলিক ভাষায় ইউনুসের কথা তাঁরা শুনতে পেলেন।
তিনি বললেন, ‘অনারার হাছে দুঁরি আইস্যেদে, অনারার এক্কানা সাহস অইবার লাই….হষ্ট গরি আইস্যে। নিজে রোজা রাইক্কে আজিয়া অনারারলাই।’ (জাতিসংঘ মহাসচিব আপনাদের কাছে এসেছেন, আপনাদেরকে সাহস যোগাবার জন্য … তিনি অনেক কষ্ট করে এসেছেন, আজ আপনাদের জন্য তিনিও রোজা রেখেছেন।)
জাতিসংঘ মহাসচিব বনজঙ্গল পেরিয়ে, সারাদিন রোজা রেখে একটা শুভ্র সফেদ পাঞ্জাবি গায় দিয়ে গিয়েছেন রোহিঙ্গাদের সাথে ইফতার করতে।
প্রফেসর ইউনুস রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে স্মরণ করিয়ে দিলেন, তাঁদের ভিটা ও গোরস্তানের কথা। বললেন, বাপ দাদার কবর জিয়ারতের সুযোগ তাঁদের নাই। সামনের ঈদে সে সুযোগ যেন হয়।
মানুষ আশায় বাঁচে, আমরাও তাঁদের সাথে আশান্বিত হতে চাই। অন্তত আশার সঞ্চার করার জন্য ধন্যবাদ প্রফেসর সাহেব। তাঁদের নিজের মাটি ও নদীর কাছে তারা যেন ফিরতে পারে।
‘রোহিঙ্গা’ শব্দটিকে আমরা পরিণত করেছিলাম আমরা সমকালীন সবচে’ ব্যবহৃত ‘গালি’ হিসেবে। এদেশে তাদেরকে যখন গালি হিসেবে নেওয়া হয়েছে তখন শরণার্থী হিসেবে তাদের মর্যাদা আজ উন্নত হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব এই গুরুত্বপূর্ণ সফরে থাকাকালে দেশের কল্যাণকামী কোনও পক্ষই বিশৃঙ্খলা যে কোনও প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বিপক্ষে থাকবে
সেই ধর্ষণের স্বীকার শত শত মায়ের যুদ্ধ শিশুরা আজ বড়ো হচ্ছে। তাদের সন্তানেরাও আজ ছিলেন ইউনুস ও গুতেরেসের এই আয়োজনে। তাঁদেরও মুক্ত স্বদেশ থাকুক। তাঁদেরও দেশ আছে। তাঁরাও রাষ্ট্রহীন নয়।
  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT