পর্তুগালের সাংবিধানিক আদালত দেশটির নতুন অভিবাসন আইনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো দে সুসার আবেদনের প্রেক্ষিতে এই রায়ে বলা হয়েছে, আইনের বিভিন্ন শর্ত সংবিধানের সুরক্ষিত মৌলিক অধিকার ও পারিবারিক জীবনের নিশ্চয়তার পরিপন্থী। রায় ঘোষণার ফলে বিতর্কিত আইনটি আংশিকভাবে বাতিল হয়ে আবার সংসদে ফেরত যাবে।
গত জুলাইয়ে কনজারভেটিভ সরকার ও ডানপন্থী রাজনৈতিক শক্তির সমর্থনে কোনো জনমত গ্রহণ বা বিস্তৃত আলোচনা ছাড়াই আইনটি পাস হয়েছিল। বিরোধী বামপন্থী দলগুলো তখনই একে ‘অমানবিক’ ও বৈষম্যমূলক বলে আখ্যা দিয়ে সতর্ক করেছিল। প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো দে সুসা সেই আইন দ্রুত সাংবিধানিক আদালতে পাঠান এবং মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে রায় দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি যুক্তি দেন, আইনটি অস্পষ্ট, বৈষম্যমূলক এবং পরিবারকে অযৌক্তিকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে পারে।
আদালতের রায়ে বাতিল হওয়া ধারাগুলোর মধ্যে রয়েছে— অভিবাসন, একীকরণ ও আশ্রয় সংস্থা (AIMA)-এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার সুযোগ সীমিত করে দেওয়া, পারিবারিক পুনর্মিলন আবেদনের বিশ্লেষণে ৯ মাসের দীর্ঘ সময়সীমা ও তা আরও ৯ মাস বাড়ানোর বিধান, পুনর্মিলনের আবেদন করার আগে দুই বছরের বাধ্যতামূলক অপেক্ষা, কেবল নাবালক সন্তান থাকলেই পুনর্মিলনের অনুমতি, এবং পুনর্মিলনের জন্য সরকার-নির্ধারিত বাধ্যতামূলক একীকরণ ব্যবস্থা। বিচারকদের মতে, এসব শর্ত পরিবারকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে আলাদা করে দিতে পারে এবং সংসদের একচেটিয়া আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ক্ষুণ্ন করে।
তবে আদালত কিছু ধারা বহাল রেখেছে। যেমন, ভিসা গোল্ডধারী ও উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের পুনর্মিলনে অগ্রাধিকার দেওয়া বৈষম্যমূলক নয়, কারণ এর উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত-গবেষণা খাতকে উৎসাহিত করা। একইভাবে, অস্বাভাবিক চাপ, সীমিত জনবল বা সম্পদের কারণে AIMA যদি সময়সীমা মানতে না পারে, তবে আদালত প্রক্রিয়া দ্রুত করার আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।
শুরু থেকেই সাংবিধানিক হিসেবে বহাল থাকা বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে— শুধুমাত্র উচ্চ দক্ষতাসম্পন্নদের জন্য কাজ খোঁজার ভিসা, দেশে প্রবেশ করে CPLP রেসিডেন্স শিরোনামের আবেদন করার সুযোগ বাতিল, এবং পূর্বে অবৈধ অবস্থানে থাকা বা বহিষ্কৃতদের জন্য যেকোনো ধরনের বসবাস, কাজ খোঁজা বা অস্থায়ী থাকার ভিসা নিষিদ্ধকরণ।
এই রায়ের ফলে পর্তুগালের অভিবাসন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে। সরকার এখন বাধ্য থাকবে আইন সংশোধন করে সংসদে ফেরত পাঠাতে। প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই আইনটি বাতিল করে সংসদে ফেরত পাঠিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই রায় শুধু বর্তমান আইনের কাঠামো পরিবর্তন করবে না, ভবিষ্যতের অভিবাসন নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব ফেলবে। অভিবাসী অধিকারকর্মীরা এটিকে মানবাধিকার ও পারিবারিক সুরক্ষার জন্য এক বড় জয় হিসেবে দেখছেন, যদিও সরকারের কনজারভেটিভ অংশ নতুন করে কঠোর শর্ত আরোপের চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।