০৬ আগস্ট ২০২৫
তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের এই উষ্ণতা কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, সে বিষয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। অনেকেই বলছেন, যেন পাকিস্তান চীনের প্রভাব থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে। তবে বাস্তবে চীনই এখনো ইসলামাবাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক অংশীদার।
বিশেষ করে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) পাকিস্তানের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। উন্নয়ন সহযোগিতার দিক থেকে বেইজিংয়ের প্রতি পাকিস্তানের নির্ভরতা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
এদিকে, ভারতের বর্তমান সরকার হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানবিরোধী অবস্থান আরও কঠোর করছে। এর ফলে ইসলামাবাদ নিরাপত্তা সংকটে পড়ছে এবং পারমাণবিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।
এই পরিস্থিতি পাকিস্তানের জন্য কিছু কৌশলগত সুযোগ তৈরি করেছে। তবে এটি কোনো সরল জিরো সাম গেম নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে স্পষ্ট বিভাজনের প্রবণতা থাকলেও চীন তুলনামূলকভাবে বাস্তববাদী অবস্থান নেয়, যেখানে উন্নয়ন এবং বাণিজ্য প্রধান বিষয় হিসেবে বিবেচিত।
চীনের মানবাধিকার ইস্যুতে পশ্চিমা দুনিয়ার সমালোচনা থাকলেও, মাত্র চার দশকে ৮০০ মিলিয়নের বেশি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার অভূতপূর্ব অর্জন বিশ্বে এক অনন্য নজির। অন্যদিকে, গাজায় চলমান সংঘাতে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর নীরব ভূমিকা তাদের নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
পাকিস্তান ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়—তার মধ্যে শান্তির নোবেল পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেওয়া এবং ২০২১ সালের কাবুল হামলার এক সন্দেহভাজনকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর উল্লেখযোগ্য। এতে ট্রাম্পের ‘শক্তিশালী নেতা’ ইমেজ আরও সুদৃঢ় হয়।
অপরদিকে, চীনকে প্রতিরোধ করতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ভরসা করছে। ভারত যুক্তরাষ্ট্রনেতৃত্বাধীন কোয়াড জোটের সদস্য, পাশাপাশি চীন-রাশিয়া নেতৃত্বাধীন ব্রিকস জোটেও সক্রিয়। এই দ্বৈত ভূমিকাই ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্কে জটিলতা সৃষ্টি করছে।
কাশ্মীরে হামলার প্রেক্ষিতে ভারতের প্রতিক্রিয়া ও পাকিস্তানকে দায়ী করে পাল্টা হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানায়। পাকিস্তান দ্রুত সাড়া দিলেও, ভারতের কিছু পদক্ষেপ ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
বিশেষত, মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল এবং ট্রাম্পের অনুরোধ উপেক্ষা করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়াকে ট্রাম্প বিশ্বাসভঙ্গ হিসেবে দেখেন। এতে দু’দেশের সম্পর্কে অস্বস্তি বাড়ে।
মূল সমস্যা হলো, ভারত ব্রিকসের মাধ্যমে বিকল্প বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরিতে যুক্ত, যা ডলারের আধিপত্যে হুমকি সৃষ্টি করছে। এই কারণেই ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে কৌশলগতভাবে চাপে রাখার চেষ্টা করেছে—কখনো সামাজিক মাধ্যমে কটাক্ষ, কখনো বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করে।
যদি ভারত এই চাপের কাছে নতি স্বীকার করে, পাকিস্তানের লাভ সাময়িক হবে। আর যদি ভারত যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব এড়িয়ে চলে, তবে পাকিস্তানের জন্য এই ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি একটি কার্যকর ও লাভজনক অবস্থান তৈরি করতে পারে।
সূত্র: দ্য ডন