পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘৃণিত ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অপূর্ব পালকে গ্রেপ্তার করেছে ভাটারা থানা পুলিশ। শনিবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি স্থানে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। এই ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।
পুলিশ জানায়, শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় অপূর্ব পাল কুরআনের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে সেটি পায়ের নিচে রেখে লাথি মারেন। তিনি এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের ভিডিও নিজেই ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করেন। ভিডিওটি ভাইরাল হলে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। প্রতিবাদ জানাতে গেলে সহপাঠীদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে ক্যাম্পাস সিকিউরিটি সদস্যরা তাকে ‘সেফ এক্সিট’ দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় সারা দেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ ব্যাপারে গাফিলতির ব্যাপারে নিন্দা প্রকাশ করেন।
পরে রাতভর অভিযানের পর ভাটারা থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, “অপূর্ব পালের এই কর্মকাণ্ড ধর্মীয় অনুভূতিতে ভয়াবহ আঘাত হেনেছে, যা স্পষ্ট অপরাধ। তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় উসকানি, ঘৃণা ছড়ানো ও শান্তি বিঘ্নিত করার ধারায় মামলা হয়েছে।”
ভিডিওতে দেখা যায়, অপূর্ব বলছে— “এই কুরআন আমি আমার টাকায় কিনেছি, তাই আমি ইচ্ছে মতো যা খুশি করতে পারি।” এরপর তিনি গ্রন্থটি ছিঁড়ে লাথি মারেন। এই দৃশ্য দেশজুড়ে নিন্দা ও ক্ষোভের জন্ম দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অপূর্ব পাল দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগে পূর্বে তাকে তিন সেমিস্টারের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তিনি মসজিদে জুতা পরে প্রবেশ, ইমামকে আক্রমণের চেষ্টা এবং মাদকাসক্ত আচরণের অভিযোগে একাধিকবার তদন্তাধীন ছিলেন। আরও জানা যায়, গত বছর ঘাটপাড় এলাকায় তিনি এক ব্যক্তির গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানোর ঘটনাতেও জড়িত ছিলেন।
এইসব অপরাধমূলক ইতিহাসের কারণে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, “অপূর্বের মতো বিকৃত মানসিকতার একজন মানুষকে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে দেওয়াই আজকের এই জঘন্য ঘটনার জন্য দায়ী।”
ভাটারা থানার ওসি মো. ইয়াসিন ফারুক বলেন, “আমরা তার মানসিক অবস্থা ও উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখছি। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।” আদালত প্রাথমিকভাবে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মীয় অবমাননার ঘটনায় গভীর নিন্দা জানায় এবং তদন্তে পুলিশের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে।”
বর্তমানে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ধর্মীয় সংগঠন, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে যাতে ভবিষ্যতে কেউ পবিত্র ধর্মগ্রন্থ নিয়ে এমন ন্যক্কারজনক আচরণ করার সাহস না পায়।