নিউইয়র্ক টাইমস-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন “As Bangladesh Reinvents Itself, Islamist Hard-Liners See an Opening” শিরোনামে বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে একপাক্ষিক ও বিভ্রান্তিকরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। উসকানিমূলক প্রতিবেদন এ দেশটিকে ধর্মীয় উগ্রবাদের কবলে পড়তে যাচ্ছে বলে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা বাস্তবতার সরলীকৃত ও অসম্পূর্ণ চিত্র। এই ধরণের একপেশে প্রতিবেদন ১৮ কোটি মানুষের একটি সমৃদ্ধ জাতির প্রতি অবিচার করে।
প্রতিবেদনটি ধর্মীয় টানাপোড়েন ও রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা তুলে ধরলেও, সামগ্রিক অগ্রগতির বিষয়টি পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে, নারীদের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নারীদের কল্যাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে, যা প্রতিবেদনের অন্ধকারাচ্ছন্ন চিত্রের বিপরীত।
একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো “ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল ২০২৫”, যেখানে দেশব্যাপী ২৭ লাখেরও বেশি মেয়ে ৩,০০০টি খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছে। দেশজুড়ে এই বিপুল পরিমাণ নারীর অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতিতে নারীদের অংশগ্রহণ কতটা বিস্তৃত ও গতিশীল। অথচ একটি মাত্র ফুটবল খেলা বন্ধ হওয়া নিয়ে প্রতিবেদনে অতিরঞ্জিত ভাষায় আলোচনা করা হয়েছে, যা দেশের নারী শক্তির অগ্রযাত্রাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে।
আরও পড়ুনঃ
বৃহস্পতিবার ব্যাংকক যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা, শুক্রবার সম্ভাব্য মোদি-ইউনূস বৈঠক
এছাড়া, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেননি। এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং তার দীর্ঘদিনের নারী ক্ষমতায়নের কাজকে উপেক্ষা করে। ইউনূস সারা জীবন নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছেন, যার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন। একজন বাবা হিসেবে, একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে এবং একজন নেতা হিসেবে তিনি নারীদের উন্নয়নকে সর্বদা অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ধর্মীয় সহিংসতা বলে চিহ্নিত করা ভুল হবে। শেখ হাসিনার বিদায়ের পর সংঘটিত কিছু রাজনৈতিক সংঘর্ষকে সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে অভিহিত করা হয়েছে, যা বাস্তবতার সাথে মেলে না।
রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়শই ধর্মকে ব্যবহার করে জনসমর্থন আদায়ের জন্য, যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলে। কিন্তু এটিকে পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক সংঘাত হিসেবে দেখানো বিভ্রান্তিকর।
বর্তমান সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে এবং জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। দেশের সামাজিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে উগ্রবাদ দমনের প্রচেষ্টাকে ভুল তথ্য দিয়ে খাটো করা উচিত নয়।
বাংলাদেশ এখন এশিয়ার অন্যতম উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যেও দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে, রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১২%, ব্যাংকিং খাত স্থিতিশীল আছে এবং টাকার বিনিময় হার ১২৩ টাকা প্রতি ডলারে ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এশীয় নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের
অধ্যাপক ইউনূস গত ৮ মাস ধরে বিশ্বজুড়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি চীনে তার সফরের সময় বাংলাদেশের জন্য ২.১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ও ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। আগামী সপ্তাহে ঢাকায় ৫০টি দেশের ২,৩০০ বিনিয়োগকারী উপস্থিত থাকবেন, যেখানে মেটা, উবার, স্যামসাং-এর মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও থাকবেন।
বাংলাদেশ এখন বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। এটি একটি আশার গল্প, শক্তির গল্প, সম্ভাবনার গল্প—যা দুঃসংবাদ ছড়ানোর চেষ্টার আড়ালে হারিয়ে যাওয়া উচিত নয়।
প্রতিবেদনটি কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা তুলে ধরে পুরো দেশকে উগ্রপন্থার উত্থান বলে চিত্রিত করেছে। এক ব্যক্তির গ্রেপ্তার হওয়া বা মুক্তি পাওয়া দিয়ে ১৮ কোটি মানুষের একটি বৈচিত্র্যময় দেশকে চিহ্নিত করা সত্যিই অন্যায়।
বাংলাদেশ সব সময় ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও বহুত্ববাদের পক্ষে থেকেছে। বিশ্বের বহু দেশই ধর্মীয় উগ্রপন্থার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এটি দমন করছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবে উগ্রবাদের উত্থান ঘটাবে—এমন সিদ্ধান্তমূলক উপসংহার টানা ভুল। দেশের গণতান্ত্রিক চেতনা, গতিশীল নাগরিক সমাজ এবং তরুণ ও নারীদের অগ্রগতির ধারা কখনোই উগ্রপন্থীদের হাতে পুরোপুরি চলে যেতে দেবে না।
বাংলাদেশের ইতিহাস, গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতি, এবং নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রমাণ করে যে দেশটি সামনে এগিয়ে যাবে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা দিয়ে পুরো দেশকে বিচার করা উচিত নয়। বরং সামগ্রিক উন্নয়ন, সামাজিক অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বৃহত্তর চিত্রকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
এটি একটি শক্তিশালী, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সম্ভাবনাময় দেশের গল্প—এবং এই গল্পটি যথাযথভাবে বলা প্রয়োজন।
সূত্র: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
আমাদের পথ চলায় সঙ্গী হন আপনিও: