ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু-র বিস্ফোরক মন্তব্যে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ABC News-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি-কে হত্যা করা “সংঘাত আরও বাড়াবে না বরং শেষ করে দেবে”।
নেতানিয়াহু বলেন:
“আমরা শুধু আমাদের প্রয়োজনীয় কাজটাই করছি। এই শাসনব্যবস্থা গত অর্ধ শতক ধরে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস ছড়িয়েছে। ইরান এই যুদ্ধকে চিরস্থায়ী করতে চায় এবং আমাদের পারমাণবিক সংঘাতের মুখোমুখি করছে। ইসরায়েল এই আগ্রাসন থামাচ্ছে—এবং এর একমাত্র উপায় হলো, অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।”
নেতানিয়াহুর এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন—ইসরায়েলই এবারের সংঘাতের প্রথম উসকানিদাতা। বিভিন্ন গোয়েন্দা রিপোর্ট ও মিডিয়া ইনভেস্টিগেশনের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, ইরান সরাসরি ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কোনো হামলা চালায়নি। বরং, “জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি”-র অজুহাতে ইসরায়েল তেহরানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় প্রায় এক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ছিল ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন, শাহরান তেল ডিপো, এবং পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র।
বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রথম-আঘাত “unprovoked” এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ হিসেবে বিবেচিত, কারণ কোনো যুদ্ধ ঘোষণার পূর্বেই এটি ঘটেছে।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৯০ শতাংশই সাধারণ বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১,৪৮১ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রীয় পরমাণু বিভাগ এবং সম্প্রচারের সঙ্গে যুক্ত প্রযুক্তিবিদরা।
নেতানিয়াহু দাবি করছেন, ইরান একটি ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’ চায়। অথচ গত এক দশকে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘটিত বেশিরভাগ সংঘাতেই ইসরায়েলের সক্রিয় ভূমিকা দেখা গেছে—সিরিয়া, গাজা, লেবানন থেকে শুরু করে ইরান পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের বক্তব্য মূলত পশ্চিমা জনমতকে প্রভাবিত করে একটি দীর্ঘমেয়াদি আগ্রাসন ন্যায্যতা দিতে ব্যবহৃত হয়।
জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বহু রাষ্ট্র ইতোমধ্যেই উভয় পক্ষকে আত্মসংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বরং আরও বেশি আগ্রাসী অবস্থান নেওয়া হচ্ছে, যা নেতানিয়াহুর এই মন্তব্য থেকেও স্পষ্ট। একজন রাষ্ট্রীয় নেতাকে হত্যার হুমকি আন্তর্জাতিক কূটনীতির নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য, যুদ্ধ বন্ধ করার ছুতোয় উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক হত্যা পরিকল্পনার ইঙ্গিত, বাস্তবে যুদ্ধের আরও বিস্তার ডেকে আনতে পারে। বিশেষত, যখন এই সংঘাতের সূচনা ঘটেছে তথ্য-প্রমাণহীন “প্রতিরক্ষা” অজুহাত দিয়ে ইসরায়েলের সরাসরি হামলার মাধ্যমে, তখন এই ধরনের ভাষ্য বিশ্বশান্তি ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
তথ্যসূত্র: ABC News, সাক্ষাৎকার: ১৫ জুন, Al Jazeera Live, ১৫ জুন, UN Security Council Briefings, ১৩-১৪ জুন