গত শুক্রবার (১৮ জুলাই) ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের (OHCHR) আঞ্চলিক অফিস আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার পর থেকেই দেশব্যাপী শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
জনপ্রিয় ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা মিজানুর রহমান আযহারী নিজের ফেসবুক পোস্টে এই অফিস খোলার উদ্দেশ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লেখেন,
“এদেশে জাতিসংঘের আঞ্চলিক অফিস কেন? যেসব দেশে তাদের আঞ্চলিক দপ্তর রয়েছে, সেসব দেশের জনগণ কি সেখানে শান্তিতে আছেন? শান্তি আর মানবাধিকার রক্ষায় আমরা নিজেরা পারস্পরিক বোঝাপড়া মজবুত না করলে, তারা এখানে কি করতে পারবে?”
তার এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। মন্তব্যের ঘরে নেটিজেনদের অনেকেই তাদের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন।
বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন জনাব আযহারীর এই পোস্টে জাতিসংঘের মানবাধিকার ধারণাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেন। তিনি লেখেন “মানবাধিকার শব্দটি ইতিবাচক মনে হলেও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ধারণা ও কার্যক্রম বাংলাদেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং জাতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। নারী অধিকার, LGBTQ+ অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, এবং মৌলিক স্বাধীনতা ইত্যাদি ইস্যুতে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এখানকার সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
ড. সরোয়ার বিশেষভাবে LGBTQ+ এজেন্ডার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, অনেক সময় জাতিসংঘ সরাসরি LGBTQ+ শব্দ ব্যবহার না করলেও “gender identity”, “non-discrimination”, কিংবা “civil society strengthening” এর মতো শব্দের আড়ালে পরোক্ষভাবে এই কার্যক্রম চালিয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ইসলামপন্থী গোষ্ঠী ও সামাজিক সংগঠন OHCHR অফিস স্থাপনের বিরোধিতা করে আসছিল। সামাজিক মাধ্যমে তাদের দাবি ছিল, মানবাধিকার রক্ষার দায় যদি জাতিসংঘের এতই থাকে, তাহলে ফিলিস্তিন বা কাশ্মীরের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের এলাকাগুলোতেই প্রথমে এমন অফিস স্থাপন করা উচিত।
এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় অফিস স্থাপনকে অনেকেই দেখছেন পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নের ‘গেটওয়ে’ হিসেবে। বিশেষত ইসলামপ্রিয় জনগোষ্ঠীর মাঝে এই নিয়ে প্রবল উদ্বেগ তৈরি হয়েছে—তাদের আশঙ্কা, এই অফিসের মাধ্যমে বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সামাজিক কাঠামোয় বৈদেশিক আদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা হতে পারে। উক্ত পোস্টের বেশিরভাগ মন্তব্যই ছিল এসব আশঙ্কাকে কেন্দ্র করে।