মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি ধস, হালাল পণ্যে সম্ভাবনা কাজে লাগাতে উদ্যোগ জরুরি - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
চ্যাটজিপিটি পরামর্শে বিরল রোগে আক্রান্ত মার্কিন নাগরিক, সতর্ক করল মেডিকেল জার্নাল আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ৮০০, আহত আড়াই হাজারের বেশি ইন্দোনেশিয়ায় শিক্ষার্থী ও নাগরিক সংগঠনের বিক্ষোভ স্থগিত, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার জাককানইবি কেসস্প্রিন্ট ২০২৫ এর গ্র্যান্ড ফিনালে:বিজয়ী দল ‘ব্যাকসিট ড্রাইভার্স’ আমরণ অনশনের মুখে নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাংলায় কথা বলার অপরাধে কলকাতায় এক হিন্দু যুবককে তিরস্কার বাকৃবিতে হল ত্যাগের নির্দেশের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল তিন মাসের বিরতি শেষে খুললো সুন্দরবনের দ্বার, জেলে ও পর্যটকদের ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য গোলের বদলে প্লোভার ডিম! অস্ট্রেলিয়ায় ফুটবল মাঠ থমকে গেল ২০৩০ সালের পর আর থাকছে না মহাকাশ স্টেশন ISS

মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি ধস, হালাল পণ্যে সম্ভাবনা কাজে লাগাতে উদ্যোগ জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫
  • ৫৬ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১০৮ মিলিয়ন ডলার কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই আয় ছিল ৯৩৩ মিলিয়ন ডলার। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ওমান, কুয়েত, কাতার, ইরান, ইরাক, জর্দান, লেবানন ও সিরিয়াসহ প্রায় সব দেশেই রপ্তানি কমেছে।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক হলেও মধ্যপ্রাচ্যের অধিবাসীরা যে ধরনের পোশাক ব্যবহার করে, তা বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। এই অঞ্চলে রপ্তানি আয় মূলত শাকসবজি ও খাদ্য সামগ্রীর ওপর নির্ভরশীল, যা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পাঠানো হয়। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে শাকসবজি রপ্তানি ৫৭.৯৩ শতাংশ কমেছে, যার প্রধান কারণ উচ্চ দাম, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রণোদনার অভাব।

বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) জানায়, হালাল পণ্যের বাজার বর্তমানে ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যা তৈরি পোশাক বাজারের দ্বিগুণেরও বেশি। তবে বাংলাদেশ বছরে হালাল পণ্য রপ্তানি করছে মাত্র ৮৪৩ মিলিয়ন ডলার, যার অধিকাংশই কৃষিপণ্য। বিসিআই প্রেসিডেন্ট আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, হালাল পণ্য শুধু খাদ্য নয়, নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীও হতে পারে। মুসলিমপ্রধান দেশ ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও হালাল পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, প্রায় ১ কোটির মতো বাংলাদেশি নাগরিক সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান ও কুয়েতসহ উপসাগরীয় দেশগুলো এবং মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন। এই প্রবাসীরা বাংলাদেশের হালাল পণ্যের প্রধান ভোক্তা। বেসরকারি খাতের কর্মকর্তারা মনে করছেন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতের মতো দেশগুলো বৈশ্বিক হালাল বাজারে সফল হয়েছে। বাংলাদেশেরও উচিত লক্ষ্যভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে এই বিশাল বাজারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

প্রকল্প অনুযায়ী, হালাল খাদ্য, ওষুধ, প্রসাধনী ও ইসলামি শরিয়তসম্মত পর্যটনসহ হালাল পণ্য ও সেবার বৈশ্বিক বাজার ২০২৫ সালে ৭.৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। হালাল খাদ্য ও পানীয় খাত বাজারের প্রধান অংশ, যার মূল্য ২০২৪ সালে ২.৭১ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ২০৩০ সালে বার্ষিক ৯.৫৬ শতাংশ হারে বেড়ে ৪৫৬৯.৬৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। খাদ্যের বাইরেও রয়েছে ওষুধ, প্রসাধনী এবং হালাল পর্যটন। মুসলিম ভ্রমণকারীদের ব্যয় ২০২২ সালে ২৮৩ বিলিয়ন ডলার পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হালাল পণ্যের সার্টিফিকেশন বাংলাদেশের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে বিএসটিআই ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই দায়িত্বে রয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ২০১৭ সালে চালু হওয়া হালাল ল্যাব যন্ত্রপাতির অভাবে কার্যকর হয়নি। সম্প্রতি ১৪ জুলাই ২০২৫-এ বিএসটিআই নিজস্ব হালাল টেস্টিং ল্যাব উদ্বোধন করেছে, যা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে দ্রুত সনদ প্রদান নিশ্চিত করবে।

সরকার ইতোমধ্যে বৈশ্বিক হালাল বাজারে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অংশগ্রহণে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে হালাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। সৌদি আরব ইতিমধ্যেই বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে, উৎপাদন, প্যাকেজিং এবং রপ্তানির প্রতিটি ধাপে পূর্ণাঙ্গ মানদণ্ড অনুসরণ করতে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশ যদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নীতি অনুসরণ করে, বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করে এবং হালাল সার্টিফিকেশন সহজ করে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বব্যাপী হালাল বাজারে দেশের অবস্থান দৃঢ় করা সম্ভব। এতে শুধু রপ্তানি আয় পুনরুদ্ধার হবে না, বরং দ্বিগুণ বা তারও বেশি বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হবে।

সামগ্রিক বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হালাল সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া সহজ করা, পণ্যের বৈচিত্র্য আনা, এবং বেসরকারি খাতকে নীতি সহায়তা দিলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হবে। এতে শুধু রপ্তানি আয় পুনরুদ্ধার নয়, বরং দ্বিগুণ বা তারও বেশি বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT