
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর ভারত ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করা এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি নেই—এমন কোনো দেশে আশ্রয় নেওয়ার পথ খুঁজছেন তিনি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র এবং ভারতের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র।
রায়ের পরপরই কলকাতার রোজডেল অঞ্চলের বাসস্থান ত্যাগ করে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান কামাল। কয়েক দিন ধরে কলকাতায় অবস্থানকারী দলের নেতাকর্মীরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। নিজেও ভারত ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, “ভারতে বেশিদিন থাকা নিরাপদ মনে করছি না। এখনই বিকল্প চিন্তা করতে হচ্ছে।”
গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। ১৭ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে। এর পরপরই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যর্পণের জন্য দিল্লিকে কূটনৈতিক চিঠি পাঠানো হয়। ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের আবেদনের বিষয়টি তাদের বিচারিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের বৈঠকে প্রত্যর্পণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয় বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।
এর মাঝেই আসে কামালের দেশ ছাড়ার প্রস্তুতির তথ্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখার এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রত্যর্পণ অনুরোধ পৌঁছানোর পর তিনি আগের থাকার ঠিকানা বদলে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন। অনেকদিন ধরেই তিনি অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন বলেও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সম্প্রতি ভারতে অবস্থানকারী তার এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথনেও দেশ ছাড়ার ইঙ্গিত দেন কামাল। তিন মিনিটের সেই কথোপকথনে তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ এবং তিনি ‘নতুন চিন্তা’ করছেন।
ভারতের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর থেকেই কামাল দ্রুত অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক যোগাযোগও এখন সেই প্রক্রিয়াকে ঘিরে সক্রিয়।
বাংলাদেশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, “সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভারত থেকে অন্য দেশে যেতে চাইছেন—এমন তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। আমরা ভারতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক পোস্টে আশা ব্যক্ত করেছেন—প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার শুরু হবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দিয়ে।