মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে ছাড়মূল্যে তেল আমদানি বন্ধ করছে না ভারত। বরং দিল্লি জানিয়েছে, তাদের জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। শনিবার (২ আগস্ট) দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং রয়টার্সসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ভারত সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ট্রাম্প শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমার জানা মতে, ভারত রাশিয়া থেকে আর তেল নিচ্ছে না। আমি শুনেছি এমনটাই। এটা ভালো পদক্ষেপ।” তবে তার এ বক্তব্যকে কার্যত ভুল প্রমাণ করে দিল্লির জ্যেষ্ঠ দুই কর্মকর্তা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস–কে জানান, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত থাকবে এবং এ সংক্রান্ত চুক্তিগুলোও বহাল আছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস এবং তুরস্কভিত্তিক আনাদোলু এজেন্সিও ভারতীয় সূত্রের বরাতে জানায়, ভারতের রিফাইনারিগুলো এখনো রাশিয়া থেকে ছাড়মূল্যে অপরিশোধিত তেল কিনছে এবং তা চলমান থাকবে। অর্থনৈতিক বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য উপকারী বলেও উল্লেখ করা হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রন্ধীর জায়স্বাল শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, “ভারতের জ্বালানি কেনাবেচা বাজার-ভিত্তিক, জাতীয় স্বার্থ ও প্রাপ্যতার উপর নির্ভরশীল। তৃতীয় পক্ষের বক্তব্য আমাদের নীতিতে প্রভাব ফেলবে না।”
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে রাশিয়া ভারতের প্রধান তেল সরবরাহকারী ছিল। ভারতের মোট অপরিশোধিত তেলের প্রায় ৩৫ শতাংশ রাশিয়া থেকে এসেছে। মূলত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া ভারত ও চীনের মতো বাজারে মূল্যছাড়ে তেল বিক্রি করছে, যা ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য লাভজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ জ্বালানি ও সামরিক সম্পর্ক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে অন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলনের অভিযোগ তুলে চলতি সপ্তাহেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। হোয়াইট হাউসের এক উপদেষ্টা বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার জবাবে ভবিষ্যতে আরও কঠোর বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের চাপ সত্ত্বেও ভারত তার কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থেই রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি চুক্তি চালিয়ে যেতে চায়। দেশটির অবস্থান হলো—যুক্তরাষ্ট্রের চাপ নয়, বরং বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত–মার্কিন সম্পর্কের উত্তাপ বাড়তে থাকলেও, নয়াদিল্লি এখন পর্যন্ত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। রাশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্য অব্যাহত থাকবে এবং জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে তারা কোনো ধরনের বিদেশি চাপ মেনে নেবে না।