নোটিশ:

উইঘুর সংকটের মধ্যে চীনের আগ্রাসন: ভারতের লাদাখ ঘেঁষে নতুন প্রশাসনিক এলাকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৬৮ বার দেখা হয়েছে
India China
China new Country in Indian Border

ভারতের দাদাগিরি উপর বড়দাদাগিরি করছে চীন।  দুদেশের মধ্যকার সীমান্ত সমস্যা আবারও উত্তেজনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। সম্প্রতি উত্তর-পশ্চিম চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে দুটি নতুন প্রশাসনিক কাউন্টি (হে’আন এবং হেকাং) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে চীন। ভারতের দাবি, এই কাউন্টিগুলোর কিছু অংশ তাদের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের অন্তর্ভুক্ত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি চীনের বেআইনি দখলদারিত্ব হিসেবে উল্লেখ করে কূটনৈতিক আপত্তি জানিয়েছে।

চীনের নতুন কাউন্টি ঘোষণা এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া

২৭ ডিসেম্বর চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া জানিয়েছে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি এবং রাষ্ট্রীয় পরিষদ হে’আন ও হেকাং কাউন্টি প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে। হোটান প্রিফেকচারের অধীনে থাকা এই কাউন্টিগুলোর মধ্যে হে’আন কাউন্টি চীনের দখলকৃত আকসাই চীনের বিরাট অংশজুড়ে অবস্থিত। আকসাই চীন প্রায় ৩৮,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত, যা ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের পর থেকে চীনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “আমরা কখনোই এই এলাকায় চীনের বেআইনি দখলদারিত্ব মেনে নিইনি। চীনের এই পদক্ষেপ আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।”

ভারত আরও জানায়, চীনের এমন একতরফা সিদ্ধান্ত সীমান্ত বিরোধের সমাধানের জন্য চলমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করতে পারে।

উইঘুর মুসলিমদের প্রাসঙ্গিকতা এবং চীনের কৌশল

জিনজিয়াং অঞ্চল, যেখানে এই নতুন কাউন্টিগুলো অবস্থিত, উইঘুর মুসলিমদের বাসস্থান হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণনজরদারি, পুনঃশিক্ষা শিবির এবং সাংস্কৃতিক নিপীড়নের মতো পদক্ষেপের জন্য আন্তর্জাতিক মহল চীনকে সমালোচনা করে আসছে।

চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (BRI) প্রকল্পের মূল কেন্দ্র। হে’আন ও হেকাং কাউন্টি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চীন শুধু সীমান্ত এলাকায় তাদের আধিপত্য নিশ্চিত করতে চায় না, বরং জিনজিয়াং অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করার লক্ষ্য নিয়েছে।

উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীনের কঠোর পদক্ষেপ এই নতুন প্রশাসনিক কাঠামোর মাধ্যমে আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীন প্রায়শই তাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগকে ভিত্তি করে উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করে, যা এই অঞ্চলে চীনের আধিপত্য ধরে রাখার একটি কৌশল।

India China Prime Minister in Rival

ভারত-চীন সম্পর্কের অবনতি

চীন এবং ভারতের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে অরুণাচল প্রদেশ এবং লাদাখকে কেন্দ্র করে চীন একাধিকবার আঞ্চলিক মানচিত্রে পরিবর্তন এনেছে। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীন সেনাদের সংঘর্ষ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে চরমে নিয়ে যায়।

সম্প্রতি, সীমান্ত সমস্যা নিয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর কূটনৈতিক আলোচনা পুনরায় শুরু হয়। গত ১৮ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই বৈঠকের ১০ দিনের মধ্যেই চীনের এই নতুন কাউন্টি ঘোষণার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আবারও সংকটে পড়েছে।

দুই দেশের সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা
লাদাখে সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হলেও চীনের নতুন কাউন্টি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। ভারতের দাবি, চীনের এমন পদক্ষেপ কেবল সীমান্ত বিরোধকেই জটিল করবে না, বরং কূটনৈতিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

দুই দেশই সীমান্ত সমস্যার সমাধান এবং সম্পর্কের উন্নতি চাইলেও নতুন করে সৃষ্টি হওয়া এই উত্তেজনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রভাব

চীনের এই সিদ্ধান্ত শুধু ভারত নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতের লাদাখ অঞ্চলে নতুন কাউন্টি প্রতিষ্ঠা শুধু সীমান্ত বিরোধকে আরও জটিল করবে না, বরং এশিয়ার বৃহৎ ভূরাজনীতিতে শক্তির ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে।

অন্যদিকে, উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীনের নীতিকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চীনের নতুন পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশ ইতোমধ্যেই উইঘুর মুসলিমদের পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছে এবং চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে।

চীনের নতুন কাউন্টি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত ভারত-চীন সম্পর্কের উত্তেজনাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। এই পদক্ষেপ কেবল দুই দেশের সীমান্ত সমস্যাকে জটিল করবে না, বরং জিনজিয়াং অঞ্চলের উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার এই ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে, যা শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আরও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তুলেছে।

  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT