দীর্ঘ প্রস্তুতি শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে চালু হতে যাচ্ছে স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ‘এন্ট্রি/এক্সিট সিস্টেম’ বা ইইএস (Entry/Exit System)। ১২ অক্টোবর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই ডিজিটাল সিস্টেমে ইইউ’র বাইরের দেশ থেকে আগত ও বহির্গামী যাত্রীদের প্রবেশ ও প্রস্থানের সব তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ করা হবে। ইইউ কমিশনের এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। নতুন এই ব্যবস্থায় যাত্রীদের বায়োমেট্রিক তথ্য—যেমন ছবি ও আঙুলের ছাপ—সংগ্রহ করা হবে এবং ভিসার মেয়াদ যাচাইয়ের জন্য তা ব্যবহার করা হবে। এতে করে ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে অবস্থানকারী, জাল নথি ব্যবহারকারী কিংবা অনিয়মিত অভিবাসীদের সহজেই শনাক্ত করা যাবে বলে জানিয়েছে ইইউ।
সিস্টেমটি প্রথম তিন মাসে প্রতিটি সদস্য দেশের ৫০ শতাংশ সীমান্তে চালু হবে। পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে বাকি সব সীমান্তেও ইইএস কার্যকর হবে। একইসঙ্গে ছয় মাসব্যাপী সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ভ্রমণকারীদের ইইএস সম্পর্কে জানানো হবে। ইইউর ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রে এটি বাধ্যতামূলকভাবে চালু হচ্ছে, শুধুমাত্র আয়ারল্যান্ড ও সাইপ্রাস এই ধাপের বাইরে থাকবে। এছাড়া শেঙ্গেনভুক্ত কিন্তু ইইউর সদস্য নয়—এমন দেশগুলোর মধ্যে নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, লিশটেনস্টাইন ও আইসল্যান্ডেও ইইএস কার্যকর হবে।
নতুন এ সিস্টেমের বিষয়ে ইইউর মাইগ্রেশন কমিশনার মাগনুস ব্রুনার বলেন, এটি নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে এবং নিয়মিত ভ্রমণকারীদের সুরক্ষিত রাখবে। তিনি আরও বলেন, অনিয়মিত অনুপ্রবেশ, মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থান এবং জালপত্র বহনের মতো অনিয়ম এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এই নতুন সীমান্ত প্রক্রিয়া কিছু ভোগান্তিও তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। বিশেষ করে ব্রিটেনসহ কিছু দেশ ইতোমধ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে যে, এই ডিজিটাল সীমান্ত যাচাই প্রক্রিয়ার ফলে ইমিগ্রেশনে সময় বেড়ে যেতে পারে। ব্রিটিশ ফরেন অফিস ভ্রমণকারীদের বাড়তি সময় নিয়ে ইইউতে প্রবেশের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে আগত যাত্রীর সংখ্যা বেশি এবং তাদের ভিসা সংক্রান্ত যাচাই জটিল হয়, তাই এই অঞ্চলের নাগরিকদের জন্য ইইএস বাস্তবায়নের প্রভাব আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। একইসঙ্গে বলা হচ্ছে, প্রথমবার ইইউ অভিবাসন ব্যবস্থায় এ ধরনের ডিজিটাল ও বায়োমেট্রিক নজরদারি চালু হওয়ায় আগত বছরগুলোতে এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে লক্ষ্য করা যাবে।