মার্কিন ধনকুবের ও টেসলা সিইও ইলন মাস্ক ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে এই দলটি আমেরিকানদের ‘আবার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেবে’ বলে জানিয়েছেন মাস্ক। শনিবার (৫ জুলাই) এক পোস্টে তিনি জানান, “দুইয়ে একের অনুপাতে আমেরিকানরা একটি নতুন রাজনৈতিক দল চায় এবং তোমরা সেটাই পাবে।”
সম্প্রতি মাস্ক তার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ একটি জরিপ চালান। সেখানে তিনি অনুসারীদের প্রশ্ন করেন, তারা ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে একটি নতুন দল চান কি না। সেই জরিপের ফলাফলে প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ ‘হ্যাঁ’ ভোট দেন। এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে দল গঠনের ঘোষণা দেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এই ব্যক্তি।
মাস্ক বলেন, “যখন দুর্নীতি ও অপচয়ের মাধ্যমে দেশকে দেউলিয়া করা হয়, তখন আসলে আমরা একদলীয় শাসনে বাস করি, গণতন্ত্রে নয়। এই পরিস্থিতি বদলানোর জন্যই আমেরিকা পার্টি গঠন করা হয়েছে।” তবে এই দল এখনও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়নি বলে জানা গেছে। কে এই দলের নেতৃত্ব দেবেন বা দলের কাঠামো কেমন হবে, তাও এখনও জানানো হয়নি।
এর আগে ট্রাম্পের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন মাস্ক। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে পুনঃনির্বাচিত করতে মাস্ক ব্যক্তিগতভাবে ২৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছিলেন। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (DOGE)’ বিভাগটির প্রধান হিসেবে দায়িত্বও পালন করেন তিনি। যার কাজ ছিল সরকারি বাজেট কমানো ও খরচে কড়াকড়ি আনা।
তবে গত মে মাসে ট্রাম্পের নতুন কর এবং বিপুল ব্যয়সংবলিত পরিকল্পনার বিরোধিতা করে মাস্ক সেই পদ থেকে সরে দাঁড়ান। ট্রাম্প তার “Big, Beautiful Bill” hf ‘বড়, সুন্দর বিল’ নামে পরিচিত সেই আইন পাস করাতে চাইলে মাস্ক প্রকাশ্যে সেটির কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এই বিল দেশের উপর পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণের বোঝা চাপাবে। এটা আসলে ‘একদলীয় দেশ’ হয়ে গেছে, আমরা এখন গণতন্ত্রে নেই।”
এই ঘটনার পর থেকেই মাস্ক ঘোষণা দেন, তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবেন, যা সত্যিকার অর্থে জনগণের কথা বলবে। অবশেষে ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে এক জরিপের মাধ্যমে জনমত যাচাইয়ের পর ৫ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠনের ঘোষণা দেন তিনি।
মাস্ক জানিয়েছেন, দলটি শুরুতে ২-৩টি সিনেট আসন ও ৮-১০টি হাউস আসন লক্ষ্য করবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভায় খুবই সামান্য পার্থক্যে আইন পাস হয়। এই সামান্য আসনগুলো দখল করলেই বিতর্কিত বিল পাস ঠেকানো সম্ভব হবে এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো যাবে।
ট্রাম্পের সাথে সম্পর্কের শুরুতে দু’জন ছিলেন ঘনিষ্ঠ মিত্র। কিন্তু নীতিগত মতপার্থক্যের জেরে বর্তমানে দু’জন মুখোমুখি অবস্থানে। মাস্ক জানিয়েছেন, তার দল কোনো বড় রাজনৈতিক দলের সাথে জোট গঠন করবে না। বরং প্রয়োজন হলে উভয়পক্ষের সাথে আলোচনায় বসবে এবং নিজেদের অবস্থান ধরে রাখবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে এ ঘোষণা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্ক যদি ২০২৬ সালের কংগ্রেস নির্বাচনে সক্রিয় হন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।
এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে ইলন মাস্ক যে এবার সরাসরি রাজনৈতিক ময়দানে নামতে যাচ্ছেন, সেটাই এখন দেশটির রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় খবর।