চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিশ্ববাজারে মার্কিন ডলারের অবমূল্যায়ন নজরকাড়া মাত্রায় পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোর মুদ্রার তুলনায় ডলারের মূল্য ১০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। এমন বড় ধরনের দরপতন এর আগে দেখা গিয়েছিল ১৯৭৩ সালে, যখন যুক্তরাষ্ট্র স্বর্ণমান থেকে সরে আসে।
মার্কিন ডলারের এই দরপতনের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ধীরগতি এবং উচ্চ ঋণস্তর বাজারে ডলারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। পাশাপাশি, বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলো, যেমন ইউরোপ ও এশিয়ার অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ডলারের চাহিদা কমিয়েছে।
ডলারের মূল্য কমে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিদেশ সফরের খরচ বেড়ে গেছে। এর ফলে টুরিজম খাতেও প্রভাব পড়েছে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি বিনিয়োগও কমে যাচ্ছে, যা দেশটির অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।
তবে দুর্বল ডলার মার্কিন রপ্তানিকারকদের জন্য কিছু সুবিধাও এনেছে। কারণ ডলার সস্তা হলে মার্কিন পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে রপ্তানি খাত কিছুটা উজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা আমেরিকার অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত।
তবে আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক অর্থনীতিতে চাপ রয়ে গেছে। উচ্চ মূল্যমানের আমদানির কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সাধারণ জনগণের জন্য মূল্যস্ফীতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতি মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি নির্ধারণেও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। তারা বলছেন, ডলারের পতন সাময়িক হলেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সতর্ক সংকেত।
বিশ্ব অর্থনীতির ওপর মার্কিন ডলারের এই বড় ধাক্কা কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা সময়ের অপেক্ষা। তবে বলা যায়, বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আর্থিক বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।