
সাম্প্রতিক ভূমিকম্প ঢাকাসহ সিলেট অঞ্চলে বড় ধরনের ঝুঁকির ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, রাজধানীর পাশেই মাধবদী, মধুপুর এবং নোয়াখালী-ঢাকা-সিলেট পর্যন্ত বিস্তৃত সক্রিয় ফল্টলাইন রয়েছে, যা দীর্ঘদিন সুপ্ত থাকার পর যে কোনো সময়ে শক্তিশালী আন্দোলন সৃষ্টি করতে পারে। প্রায় এক যুগ আগে সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) পরিচালিত গবেষণায়ও একই তথ্য উঠে আসে।
শনিবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমদ আমার দেশকে বলেন, ঢাকার অবস্থা উদ্বেগজনক। তার মতে, ভূমিকম্পে সরাসরি মানুষ মারা যায় না, মারা যায় ভবন ধসে পড়ার কারণে। ঢাকায় অপরিকল্পিত ঘনবসতি, ভরাট মাটির ওপর নির্মিত উচ্চ ভবন এবং সংকুচিত উদ্ধার সক্ষমতা বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
তিনি জানান, ঢাকা ৩ নম্বর ভূমিকম্প জোনে এবং সিলেট ৪ নম্বর জোনে অবস্থিত। আবাসন খাতের চাপে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ডিএপি) পরিবর্তন হওয়ায় ভবনের ঘনত্ব আরও বাড়ছে, যা পরিস্থিতিকে জটিল করছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, সিলেট সবসময় উচ্চ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে ছিল। ১৮৯৭ সালের বড় ভূমিকম্পে এ অঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। গত চার-পাঁচ বছরে একাধিক ছোট ও মাঝারি কম্পন সিলেটে আতঙ্ক বাড়িয়েছে। ২০২১ সালে দিনে কয়েকবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। কিন্তু এখনো সেখানে ক্ষতি-হ্রাস, উদ্ধার ও প্রস্তুতিমূলক উদ্যোগ কার্যকরভাবে নেওয়া হয়নি।
শাবিপ্রবির অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, সিলেট যে টেকটোনিক প্লেটে রয়েছে তা প্রতি শতকে প্রায় এক মিটার করে সরে যাচ্ছে, ফলে ঝুঁকি দিনদিন আরও বাড়ছে। অধ্যাপক মুশতাক আহমদ বলেন, নগরজুড়ে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ এবং দুর্বল বিল্ডিং ডিজাইন বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তার মতে, সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত ভবনগুলোর যথাযথ কাঠামোগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা জরুরি।
এক যুগ আগে বাংলাদেশ, জাপান ও শ্রীলঙ্কার বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে সিলেট নগরীর ছয় হাজার ভবন নিয়ে করা এক জরিপে বলা হয়, রিখটার স্কেলে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও সিলেটের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে। এতে সম্ভাব্য ক্ষতি হবে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা এবং প্রাণহানি ঘটতে পারে সাত থেকে আট লাখ মানুষের।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ৩২টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা হলেও জটিলতার কারণে তা ভাঙা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে সিলেট বিভাগের ৩৮ উপজেলায় মাত্র ১৪টি ফায়ার স্টেশন রয়েছে এবং উদ্ধারযানে প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, অনুমোদনহীন বহুতল ভবন এবং সংকীর্ণ অলিগলি উদ্ধার অভিযানকে কঠিন করে তুলবে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ এখনই প্রয়োজন।
আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসেন জানান, ভৌগোলিক গঠনের কারণে সিলেট অঞ্চলে ডাউকি, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ানসহ কমপক্ষে ১০টি ফল্টলাইন সক্রিয় রয়েছে। ছয় মাত্রা বা তার বেশি শক্তির ভূমিকম্প হলে সিলেট বিভাগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।