দেশব্যাপী গড়ে ওঠা নিম্নমানের চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকার নীতিগতভাবে ২৬টি সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধের পরিকল্পনা করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও দক্ষ শিক্ষকের অভাবে এসব কলেজ থেকে অদক্ষ চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে দেশের স্বাস্থ্যসেবায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গত ১৫ বছরে ৫২টি নতুন মেডিকেল কলেজ অনুমোদন দেওয়া হলেও অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো নিজস্ব ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে পারেনি। এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি বরাদ্দও চূড়ান্ত হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে অস্থায়ী ভাড়া ভবনে, যেখানে প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ, গবেষণা সুবিধা ও আধুনিক ল্যাবের অভাব রয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে দেশের মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বর্তমানে ১১১টি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও মানসম্পন্ন শিক্ষার ঘাটতির কারণে দক্ষ চিকিৎসকের সংকট বাড়ছে। সরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, মেডিকেল শিক্ষার মান বজায় রাখতে আসনসংখ্যা কমানো ও অনুপযুক্ত মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যেও সংকট বিদ্যমান। যেমন, রাঙ্গামাটি, হবিগঞ্জ, নওগাঁ, নেত্রকোনা, মাগুরা ও নীলফামারী মেডিকেল কলেজে এখনো নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই। নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ ছয় বছর ধরে অস্থায়ীভাবে চলছে, কিন্তু স্থায়ী ক্যাম্পাস কোথায় হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
অপরিকল্পিতভাবে কলেজ অনুমোদনের ফলে দেশে চিকিৎসক সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা তৈরি হয়নি। বর্তমানে দেশে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার চিকিৎসক কর্মরত, তবে আগামী ছয় বছরে আরও ৬০ হাজার চিকিৎসক যোগ দেবেন। ফলে এত চিকিৎসকের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ অবস্থায় সরকার মেডিকেল শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, মানহীন মেডিকেল কলেজ বন্ধের পাশাপাশি আসনসংখ্যা প্রায় ১,০০০ কমানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি পর্যালোচনার পর আগামী বছর থেকে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, “অপরিকল্পিতভাবে চালু হওয়া কলেজগুলোর মান উন্নয়ন সম্ভব না হলে বন্ধ করা হবে। পাশাপাশি মেডিকেল শিক্ষকদের পদোন্নতি ও হাসপাতাল সুবিধা বাড়ানোর বিষয়েও কাজ চলছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মানসম্মত চিকিৎসাশিক্ষা নিশ্চিত করা গেলে দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন আরও বেগবান হবে।