নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অবস্থিত দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসায় ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ উপলক্ষে রবিউল আউয়াল মাসব্যাপী সিরাত প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। মাদরাসার শাখা সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র হিজবুল্লাহর উদ্যোগে গত ১২ রবিউল আউয়াল থেকে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে পুরো মাসজুড়ে। আয়োজকরা জানান, মহানবী হজরত মুহাম্মদ ﷺ -এর জীবন ও আদর্শ সহজ ও আকর্ষণীয়ভাবে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপনই এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
প্রদর্শনীতে রসুলুল্লাহ ﷺ -এর জন্ম থেকে নবুয়ত প্রাপ্তি, মাক্কি ও মাদানি জীবন, হিজরতের ইতিহাস, বদর-উহুদসহ গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব, বিদায় হজ্ব এবং ইন্তেকালের মতো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো সালভিত্তিক স্লাইড আকারে প্রদর্শিত হচ্ছে। এসব ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নবীজির জীবন সহজে জানতে পারছে এবং তাঁর আদর্শে জীবন গড়ার অনুপ্রেরণা পাচ্ছে।
দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আ.খ.ম আবুবকর সিদ্দিক বলেন, প্রতিবছর মিলাদুন্নবী ﷺ উপলক্ষে আলোচনা সভা, মাহফিল ও প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হলেও এবারের সিরাত প্রদর্শনী এক নতুন সংযোজন। যুগের চাহিদা অনুযায়ী ভিজ্যুয়াল মাধ্যমের এই উদ্যোগ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর কাছে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রদর্শনীর মাধ্যমে নবীজিকে জানার ও চেনার সুযোগ তৈরি হবে এবং এই জানা থেকেই নবীপ্রেম জাগ্রত হবে, যা ঈমানেরই অংশ।
বাংলাদেশ ছাত্র হিজবুল্লাহর নেতারা জানান, আধুনিক প্রজন্ম প্রযুক্তি ও চিত্রভাষার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হওয়ায় ভিজ্যুয়াল সিরাত প্রদর্শনী তাদের কাছে আরও কার্যকর হয়ে উঠেছে। তারা বলেন, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, এলাকাবাসীও নবীজির চরিত্র, সাহসিকতা, নেতৃত্ব ও মানবিক গুণাবলি সম্পর্কে জানতে পারবে। সিরাত প্রদর্শনীর লেখাগুলো সিরাতে ইবনে হিশাম, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আসাহহুস সিয়ার, রহমতে দোজাহা, এক নজরে সিরাতুন্নবী ও সিরাতে খাতামুল আম্বিয়াসহ নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে। প্রদর্শনীর প্রতিটি স্লাইড সূক্ষ্মভাবে ডিজাইন করেছেন মাদরাসার আরবি প্রভাষক মাওলানা জুবাইরুল হক মাহদি।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে প্রশংসা করেছেন। নবম শ্রেণির ছাত্র মুহাম্মদ রাফি বলেন, তাঁর জানা মতে বাংলাদেশে এ ধরনের সিরাত প্রদর্শনী এটাই প্রথম, যা তাঁদের অভিভূত করেছে। আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্র মুহাম্মদ সাজিদ জানান, এ আয়োজনের মাধ্যমে তারা নবীজির জীবনী ভিন্ন আঙ্গিকে জানার সুযোগ পেয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এই উদ্যোগ অব্যাহত দেখতে চান। শিক্ষক ও অভিভাবকরাও এটিকে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যতিক্রমী ও সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বাংলাদেশ ছাত্র হিজবুল্লাহর নেতৃবৃন্দ জানান, এই প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হয়েছে। লেখা সংকলন থেকে শুরু করে স্লাইড প্রস্তুত এবং মাঠে প্রদর্শনী উপস্থাপন সবকিছুই সংগঠনের দায়িত্বশীলদের কঠোর পরিশ্রমের ফসল। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামীতে নতুনত্বের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে এই উদ্যোগ চলমান থাকবে।