তেলাপোকা নামটা শুনে গা ঘিন ঘিন করে ওঠে অনেকের। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, ২০১৬ সালে একদল বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন যে, তেলাপোকার অন্ত্রে থাকা বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন গরুর দুধের তুলনায় চার গুণ বেশি পুষ্টিকর। Diploptera punctata নামের এক ধরনের তেলাপোকা, যা সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে, তাদের খাওয়ানোর জন্য ‘দুধ’ উৎপন্ন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই দুধে থাকা প্রোটিন মহিষের দুধের চেয়েও তিন গুণ বেশি শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম।
ভারতের Institute of Stem Cell Biology and Regenerative Medicine-এর গবেষক সঞ্চারী ব্যানার্জি জানিয়েছেন, তেলাপোকার দুধে প্রোটিন, ফ্যাট ও চিনি রয়েছে, যা মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করতে পারে। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, এই প্রোটিন ক্রিস্টাল টাইম-রিলিজড পুষ্টি সরবরাহ করে। অর্থাৎ, এটি ধাপে ধাপে হজম হয় এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে শক্তি প্রদান করে। গবেষক সুভ্রমনিয়ান রামাস্বামী জানান, “যদি এমন খাবার দরকার হয় যা উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত ও ধাপে ধাপে শক্তি সরবরাহ করে, তাহলে এটি হতে পারে সেরা বিকল্প।”
বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে এই প্রোটিন ক্রিস্টালের জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করেছেন, যাতে ল্যাবরেটরিতে এটি উৎপাদন করা সম্ভব হয়। বর্তমানে গবেষকরা ঈস্ট ব্যবহার করে ল্যাবে এই প্রোটিন ক্রিস্টাল উৎপাদনের চেষ্টা করছেন। যদি এটি সফল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তেলাপোকার অন্ত্র থেকে দুধ সংগ্রহ না করেও অধিক পরিমাণে এই সুপারফুড তৈরি করা সম্ভব হবে।
তেলাপোকার দুধ ভবিষ্যতে মানবদেহের জন্য উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বর্তমান বিশ্বে যেখানে সুপারফুডের চাহিদা বাড়ছে, সেখানে এটি হতে পারে একটি অনন্য ও টেকসই বিকল্প। গবেষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রোটিন ক্রিস্টাল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হলে এটি অপুষ্টি সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি খাদ্য সংকট নিরসনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে এই গবেষণার পথে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রথমত, মানবদেহে এর গ্রহণযোগ্যতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য টেকসই প্রযুক্তি এবং ব্যয় কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা দরকার।
যদিও এটি এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে, তবু বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে ভবিষ্যতে তেলাপোকার দুধ একটি সুপারফুড হিসেবে মানুষের খাদ্য তালিকায় জায়গা করে নিতে পারে।
Leave a Reply