বিশ্ব ফুটবলে নতুন যুগের সূচনা হলো। প্রথমবারের মতো আয়োজিত ৩২ দলের ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপে অবিশ্বাস্য এক চমক উপহার দিল ইংলিশ জায়ান্ট চেলসি। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনকে (পিএসজি) ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা ছিনিয়ে নিল ব্লুজরা। এদিন চেলসির হয়ে নায়ক বনে যান তরুণ ইংলিশ তারকা কোল পামার। একাই করলেন দুটি গোল, সঙ্গে সতীর্থ জোয়াও পেদ্রোকে দিয়ে করালেন আরেকটি। আর এই শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে গ্যালারিতে হাজির ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মেলানিয়া ট্রাম্প।
ফাইনালের আগে অনেকেই ভেবেছিল ফ্ল্যাশি পিএসজি-ই হয়তো শিরোপা তুলে নেবে। কারণ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে যুক্তরাষ্ট্রে উড়াল দিয়েছিল তারা। তবে চেলসি যেন ঠিক তার উল্টো ছবিই আঁকল। প্রথমার্ধেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা। ২২তম মিনিটে মালো গুস্তোর শট ফিরিয়ে দেন পিএসজি ডিফেন্ডার লুকাস বেরালদো। ফিরতি বল পেয়ে নিচু শটে বল জালে পাঠান পামার। এরপর ৩০তম মিনিটে আবারো দুর্দান্তভাবে গোল করেন এই তরুণ ফরোয়ার্ড। ডান প্রান্ত ধরে এগিয়ে গিয়ে পিএসজি’র এলোমেলো ডিফেন্সের ফাঁক দিয়ে ঠিক আগের মতোই নিচু শটে বল জালে জড়ান তিনি। ৪৩তম মিনিটে আবারও সেই পামারের পাস থেকে গোল করে ব্যবধান ৩-০ করেন নতুন যোগ দেওয়া ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড জোয়াও পেদ্রো।
প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে চেলসি যে আর ম্যাচ ছেড়ে দেবে না, তা বুঝতে বাকি ছিল না কারও। দ্বিতীয়ার্ধে পিএসজি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তাদের রক্ষণভাগের দুর্বলতা এবং মাঝমাঠের এলোমেলো অবস্থান দলে ছন্দ ফেরাতে দেয়নি। উল্টো ৮৬তম মিনিটে আরও বড় ধাক্কা খায় তারা। মাঠের বাইরে মারক কুকুরেলার চুল টানায় ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) পর্যালোচনায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন পিএসজির জোয়াও নেভেস। পুরো ম্যাচে গোলের সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি তারা। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে নেভেসের হেড সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা লিয়াম ডেলাপের শটও অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
ম্যাচ শেষে মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ৮১ হাজার ১১৮ দর্শকের সামনে উল্লাসে মেতে ওঠে চেলসি। এই জয়ে তারা শুধু প্রথমবারের মতো ৩২ দল নিয়ে আয়োজিত ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপের শিরোপাই জিতলো না, সঙ্গে নিয়ে নিল ১২৫ মিলিয়ন ডলারের প্রাইজমানি। লম্বা ও স্মরণীয় এক মৌসুমে ইউরোপিয়ান কনফারেন্স লিগ জেতা এবং প্রিমিয়ার লিগের চতুর্থ হয়ে শেষ করা চেলসির জন্য এ এক ঐতিহাসিক সাফল্য। এদিকে পিএসজি মৌসুমে ফ্রেঞ্চ লিগ ও কাপ ডাবল এবং ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় করলেও এই হারে বড় ধাক্কা খেলো। বিশেষ করে ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ ট্রফির স্বাদ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় হতাশ তাদের কোচ লুইস এনরিকে। আগামী মাসে টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষে ইউরোপিয়ান সুপার কাপ ফাইনাল দিয়ে আবার মাঠে নামার আগে এই হার নিয়ে ভাবতে হবে তাদের।
ম্যাচটি ছিল একেবারেই উৎসবমুখর। নিউইয়র্ক জায়ান্টস ও নিউইয়র্ক জেটসের হোমগ্রাউন্ডে ফিফার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হাফ-টাইম শোয়ের আয়োজন করা হয়। ম্যানহাটনের আকাশছোঁয়া ভবনের পটভূমি আর গ্যালারিতে মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির উপস্থিতি পুরো ম্যাচের মাহাত্ম্য বাড়িয়ে দেয়। তবে মাঠের ফুটবলে এইদিন পুরোপুরি চেলসির দিন। তাদের দুর্দান্ত শুরু, কোল পামারের ঝলক এবং পিএসজির বিবর্ণ পারফরম্যান্স নতুন ইতিহাস লিখে গেল বিশ্ব ফুটবলে।