মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রখ্যাত মেডিকেল জার্নাল এআই ব্যবহার করে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ নেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চ্যাটজিপিটির দেওয়া তথ্য অনুসরণ করে সোডিয়াম ব্রোমাইড খাওয়ার পর এক মার্কিন নাগরিক বিরল ‘ব্রোমিজম’ রোগে আক্রান্ত হন।
ঘটনাটি প্রকাশিত হয়েছে Annals of Internal Medicine-এ। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৬০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি সোডিয়াম ক্লোরাইড বা টেবিল সল্টের ক্ষতিকর দিক নিয়ে পড়ার পর চ্যাটজিপিটির কাছে বিকল্প জানতে চান। এআই-এর উত্তরের ভিত্তিতে তিনি তিন মাস ধরে সোডিয়াম ব্রোমাইড গ্রহণ শুরু করেন। এতে তার শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি হয় এবং গুরুতর মানসিক ও শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
চিকিৎসকেরা জানান, রোগী হাসপাতালে এসে প্রথমে দাবি করেন যে তার প্রতিবেশী তাকে বিষ খাওয়াচ্ছে। ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি পালানোর চেষ্টা করেন। পরে মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে রাখা হয় এবং সাইকোসিসের চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগীর মধ্যে প্যারানয়া, অনিদ্রা, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, মুখে ব্রণসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। এগুলো ‘ব্রোমিজম’-এর সাধারণ লক্ষণ।
চিকিৎসকেরা বলেন, ব্রোমিজম ২০ শতকের গোড়ার দিকে বহুল পরিচিত একটি রোগ ছিল এবং সে সময় মানসিক রোগের প্রায় ১০ শতাংশ ভর্তির পেছনে এর ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করা হয়। একসময় সেডেটিভ হিসেবে সোডিয়াম ব্রোমাইড ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এটি নিষিদ্ধ।
প্রতিবেদনের গবেষকরা জানান, তারা রোগীর চ্যাটজিপিটির মূল কথোপকথন দেখতে না পেলেও আলাদা করে একই প্রশ্ন করলে প্ল্যাটফর্মটি এখনো ব্রোমাইডকে বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করছে, তবে কোনো সতর্কতা দেয় না এবং চিকিৎসকের মতো ফলো-আপ প্রশ্নও করে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ঘটনা প্রমাণ করে এআই-ভিত্তিক টুল বৈজ্ঞানিক তথ্য বিকৃতভাবে দিতে পারে এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। তাই চিকিৎসকদের রোগী পরীক্ষা করার সময় এআই থেকে সংগৃহীত তথ্যের উৎসও বিবেচনা করতে হবে।
চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি নতুন সংস্করণ GPT-5 চালুর সময় দাবি করেছে, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রশ্নে এখন আরও ভালো ও সতর্ক উত্তর দেওয়া হবে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্পষ্ট করেছে, এটি কোনোভাবেই চিকিৎসকের বিকল্প নয় এবং স্বাস্থ্য নির্ণয় বা চিকিৎসার জন্য ব্যবহারযোগ্য নয়।