মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা সুচেস মাসরাকে দেশটির এক আদালত ২০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছে। আদালত তার বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকানি, বর্ণবাদী ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়ানোর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে এ কঠোর শাস্তি দিয়েছেন। পাশাপাশি মাসরাকে ১৮ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানাও করা হয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনা করছেন মাসরার আইনজীবী কাজিলেম্বায়ে ফ্রান্সিস। তিনি বলেছেন, “আমরা এই রায়কে অবিচার মনে করছি এবং সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করব।”
সুচেস মাসরা চাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইদ্রিস দেবির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ পরিচিত। ২০২৪ সালের মে মাসে দেশটির জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রায় পাঁচ মাসের জন্য তিনি দেবির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে তাদের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে।
২০২৫ সালের মে মাসে চাদের প্রসিকিউটর মাসরার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত শুরু করেন। অভিযোগ ছিল, মাসরার বিতর্কিত বর্ণবাদী ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যগুলো চাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় মানদাকাও শহরে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। ওই সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন নিহত হন এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়। এই সহিংসতায় বর্ণবৈষম্য এবং সম্প্রদায়িক বিদ্বেষ মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় মাসরাকে।
মানদাকাওয়ে সংঘটিত এই সংঘর্ষটি চাদের দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার একটি শীর্ষ পর্যায়ের ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলেই রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভেদাভেদ থেকে সময় সময় সহিংসতা দেখা দিয়েছে।
সুচেস মাসরার কারাদণ্ড চাদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিরোধীদের ওপর সরকারের কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। দেশটির মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই রায়ের সমালোচনা করেছে এবং বলেছে, “এটি একটি রাজনৈতিক দমন পীড়নের অংশ, যা বাকস্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার হরণের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।”
চাদের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীলতা ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে চলেছে। সরকারের বিরোধীরা অভিযোগ করেন, প্রেসিডেন্ট দেবি সরকারের শাসনকাল দীর্ঘায়িত করার জন্য রাজনৈতিক বিরোধীদের গুলিয়ে দেওয়া ও শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে।