যুক্তরাষ্ট্রে প্রজাপতির সংখ্যা—যারা পরাগায়ন এবং বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে—এই শতকের শুরু থেকে এক-পঞ্চমাংশের বেশি কমে গেছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। রেড অ্যাডমিরাল, আমেরিকান লেডি এবং ক্যাবেজ হোয়াইটসহ শত শত প্রজাতির উপর পরিচালিত গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
৫৫৪টি প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত কয়েক মিলিয়ন প্রজাপতির উপর পরিচালিত প্রায় ৭৬,০০০টি জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন যে ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মূলভূখণ্ডে প্রজাপতির সংখ্যা ২২% হ্রাস পেয়েছে। গবেষকরা এই পতনের জন্য বাসস্থানের ক্ষতি, কীটনাশকের ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন।
প্রজাপতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে, যেখানে অ্যারিজোনা, নিউ মেক্সিকো, ওকলাহোমা এবং টেক্সাস অন্তর্ভুক্ত।
গবেষণায় পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া ৩৪২টি প্রজাপতি প্রজাতির মধ্যে ১১৪টির (মোটের এক-তৃতীয়াংশ) সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে ১০৭টির সংখ্যা ৫০% বা তার বেশি কমেছে, এবং ২২টির সংখ্যা ৯০% এর বেশি কমেছে। চারটি প্রজাতির—ফ্লোরিডা হোয়াইট, হারমেস কপার, টেইলড অরেঞ্জ এবং মিচেলের স্যাটিয়ার—সংখ্যা ৯৯% এর বেশি কমে গেছে। তবে ৯টি প্রজাতির সংখ্যা (মোটের ৩%) কিছুটা বেড়েছে।
কিছু সাধারণ প্রজাতির মধ্যেও বড় পতন দেখা গেছে—রেড অ্যাডমিরাল ৫৮%, ক্যাবেজ হোয়াইট ৫০% এবং আমেরিকান লেডি ৪৪% কমেছে।
গবেষণার প্রধান লেখক এবং ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন পরিবেশবিদ কলিন এডওয়ার্ডস বলেন, “এই গবেষণার ফলাফল বেশ হতাশাজনক। তবে, আমরা যদি তাদের জন্য পরিবেশ উন্নত করতে পারি, তাহলে প্রজাপতিরা দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রজাপতির জীবনচক্র দ্রুত ঘটে—সাধারণত প্রতি বছরে একাধিক প্রজন্ম জন্মায়, এবং প্রতিটি প্রজন্ম বিপুল পরিমাণ ডিম পাড়ে। তাই, আমরা যদি তাদের জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারি, তাহলে তারা দ্রুত এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারবে।”
গবেষণায় মনার্ক প্রজাপতিরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে, এই প্রজাতির সংখ্যা হ্রাসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য মেক্সিকোর শীতকালীন আবাসস্থল থেকে পাওয়া যায় এবং গবেষকরা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ তথ্য ব্যবহার করায়, তাদের জন্য কোনও সুস্পষ্ট প্রবণতা চিহ্নিত করা যায়নি।
গবেষণার সহ-লেখক এবং বিংহ্যামটন ইউনিভার্সিটির সংরক্ষণ জীববিজ্ঞানী এলিজা গ্রামস বলেন, “আমরা মাত্র ২০ বছরে প্রতি পাঁচটি প্রজাপতির মধ্যে একটি হারিয়েছি। অর্থাৎ, ২০০০ সালে আপনি যদি ১০০টি প্রজাপতি দেখতেন, তাহলে ২০২০ সালে কেবল ৮০টি দেখতেন। এটি একটি অত্যাশ্চর্য ক্ষতি।”
তিনি আরও বলেন, “প্রজাপতির সংখ্যায় হ্রাসের পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে এবং নির্দিষ্টভাবে একটি কারণ নির্ধারণ করা কঠিন। দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে খরার কারণে সংখ্যায় পতন হতে পারে, মধ্য-পশ্চিমে কীটনাশক প্রধান কারণ, আর অন্যান্য অঞ্চলে বিভিন্ন মানবসৃষ্ট সমস্যার সমন্বিত প্রভাব দেখা যাচ্ছে।”
বিশ্বব্যাপী প্রজাপতির জনসংখ্যার প্রবণতা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য কম থাকলেও, অন্যান্য কিছু দেশে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরূপ হারে পতন লক্ষ্য করা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রজাপতির সংখ্যা সবচেয়ে নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মূলভূখণ্ডে ৬৫০টি প্রজাপতি প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে ৫৫৪টির পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
১০ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে বসবাস করা প্রজাপতিদের এই হ্রাস বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্যের চলমান সংকটের একটি অংশ, যেখানে বিশেষ করে কীটপতঙ্গের ক্ষতি উদ্বেগজনক, কারণ তারা বহু পরিবেশগত প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এডওয়ার্ডস বলেন, “প্রকৃতিবিদেরা প্রজাপতিদের ‘কয়লা খনির ক্যানারি’ হিসেবে ব্যবহার করেন। এই গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত করে যে আমরা যেসব কীটপতঙ্গের পর্যাপ্ত তথ্য পাইনি, তাদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য হ্রাস ঘটতে পারে।”
গ্রামস বলেন, “আমার কাছে প্রজাপতিরা গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা সুন্দর এবং আমাদের অনুপ্রাণিত করে। শুধু অস্তিত্ব রক্ষার কারণেই তাদের টিকে থাকা উচিত।”
“বাস্তুতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে, প্রজাপতিরা গুরুত্বপূর্ণ পরাগায়নকারী, তৃণভোজী এবং পাখিদের জন্য খাদ্য সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করে।”
সূত্র: রয়টার্স