মিরপুরে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো একাধিক ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে জয় তুলে নিল টাইগাররা। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্দান্ত লড়াইয়ে ৮ রানে পাকিস্তানকে হারিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করল লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৫ সালে একমাত্র ম্যাচে জয় পেলেও পূর্ণ সিরিজ জয়ের স্বাদ এবারই প্রথম পেল টিম টাইগার।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ১৩৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। পাওয়ারপ্লেতে মাত্র ২৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে টাইগাররা। ওপেনার নাইম ৭ বলে ৩ রান করে ফিরে গেলে শুরু হয় উইকেট পতনের মিছিল। লিটন, হৃদয়, পারভেজ একে একে বিদায় নেন। তবে এরপর পঞ্চম উইকেটে মাহেদি হাসান ও জাকের আলি ৪৯ বলে ৫৩ রানের একটি লড়াকু জুটি গড়েন। মাহেদি ২৫ বলে ৩৩ রান করে আউট হলেও, জাকের একপাশ আগলে রেখে ৪৮ বলে ৫৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন—যেখানে ছিল ১টি চার ও ৫টি ছক্কা। পাকিস্তানের পক্ষে সালমান, দানিয়েল ও আব্বাস ২টি করে উইকেট নেন।
১৩৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পাকিস্তানের ইনিংস যেন ধসে পড়ে। মাত্র ১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে নিজেদের সবচেয়ে বাজে শুরুর মুখে পড়ে তারা। শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব এই ধসের মূল কারিগর। দ্বিতীয় ওভারে শরিফুল হারিসকে এলবিডব্লিউ করেন, চতুর্থ ওভারে ফেরান ফখর জামানকে। আর পঞ্চম ওভারে টানা দুই বলে হাসান ও মোহাম্মদ নাওয়াজকে ফিরিয়ে পাকিস্তানকে একদম ব্যাকফুটে নিয়ে যান তানজিম।
এই ১৫/৫ স্কোর লজ্জার রেকর্ড হিসেবে পাকিস্তানের নামের পাশে লেখা থাকবে দীর্ঘদিন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটিই প্রথমবার ১৫ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারানোর ঘটনা পাকিস্তানের। আর বাংলাদেশের বোলারদের জন্য গর্বের রেকর্ড—এটাই প্রতিপক্ষের সবচেয়ে কম রানে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি (আগের রেকর্ড ২৪ রান)।
পরে সালমান ও খুশদিল কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও মাহেদি তাদের বিদায় করেন। এরপর ফাহিম আশরাফ ও আব্বাস আফ্রিদির ৪১ রানের অষ্টম উইকেট জুটিতে কিছুটা উত্তেজনা ফিরে আসে ম্যাচে। রিশাদ হোসেনের করা ১৯তম ওভারে আসে ১৫ রান, যার মধ্যে ছিল দুই চার ও একটি ছক্কা। তবে সেই ওভারের শেষ বলে ফাহিমকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান রিশাদ। শেষ ওভারে ১৩ রানের দরকার ছিল পাকিস্তানের। প্রথম বলেই চার মারেন দানিয়েল, কিন্তু পরের বলেই মিড উইকেটে শামীমের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান, আর সঙ্গেই ১২৫ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান।
বাংলাদেশের হয়ে শরিফুল ৩টি, মাহেদি ও তানজিম ২টি করে এবং মুস্তাফিজ ও রিশাদ ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন দুর্দান্ত ইনিংস খেলা জাকের আলি।
শুধু রানের হিসেবে নয়, মনের দিক থেকেও বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। শুরুর বিপর্যয়ের পর ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াই, আর শেষে দারুণ বোলিং—এই জয় শুধুই কাগজে-কলমে একটা ম্যাচ জেতা নয়, এটা এক সাহসী ও ঐতিহাসিক বার্তা। আর এক ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ নিশ্চিত করে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল টাইগাররা।
আগামী ২৪ জুলাই মিরপুরেই অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ। টাইগারদের সামনে এবার হোয়াইটওয়াশের হাতছানি। সাবাস বাংলাদেশ!