মাছ-ভাত এখন বিলাসিতা মূল্যস্ফীতির চাপে - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ

মাছ-ভাত এখন বিলাসিতা মূল্যস্ফীতির চাপে

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
  • ৬ বার দেখা হয়েছে

২৫ জুন ২০২৫

বাঙালির সংস্কৃতি ও পরিচয়ের মূল ভিত্তি ‘মাছে-ভাতে’ জীবনযাপন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে চলা মূল্যস্ফীতির চাপে এখন সেই মাছ-ভাতই হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের জন্য বিলাসিতার নামান্তর। পরিকল্পনা কমিশনের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ বলছে, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে চাল ও মাছ—দুটিই এখন নিত্যদিনের খরচে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে।

২০২৫ সালের মে মাসে চাল একাই ৪০ শতাংশ ও মাছ ২৮ শতাংশ ভূমিকা রেখেছে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে। মাঝারি চালের মূল্যবৃদ্ধি গত মাসের তুলনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ দশমিক ৪৬ শতাংশে। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের দৈনন্দিন খাবারে চালের পরিমাণ কমে এসেছে, মাছ তো রীতিমতো বিলাসিতার তালিকায়। ইলিশ, পাঙাশ, বেগুন, তেল, আম, কুমড়া, লাউসহ নানা পণ্যের দাম বাড়ায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে। যদিও আলু ও মুরগির দামে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে।

বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারি নানা পদক্ষেপের পরও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, “ভাত ও মাছ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রধান পুষ্টির উৎস। অথচ দাম এখন তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। উৎপাদন বাড়লেও এর সুফল বাজারে পৌঁছায়নি।”

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর রেকর্ড পরিমাণ চাল ও মাছ উৎপাদনের খবর এলেও বাজারে তেমন প্রভাব পড়ে না। বরং সরকারকে চাল আমদানি করতে হয়। বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

অন্যদিকে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, দেশে গম আমদানির প্রবণতা বাড়ছে। কম দামে গম পাওয়া ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত দেশে ৫৫ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ১ লাখ ২০ হাজার টন চাল আমদানি করেছে এবং সরকারি গুদামে চালের মজুত মে মাসে ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টন।

ডব্লিউএফপির তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে প্রতি মাসে মাথাপিছু একটি খাদ্যঝুড়ির খরচ ৫৮ টাকা কমে ২ হাজার ৮৪২ টাকায় নেমেছে। ডাল, আলু, মাছ ও সবজির কিছুটা দাম কমায় সাময়িক এই স্বস্তি এসেছে।

বাজেটেও মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলায় কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কৃষি আয় করমুক্ত রাখা, শতাধিক পণ্যে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার এবং কৃষিযন্ত্রাংশে শুল্ক হ্রাসসহ নানা পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজেট ঘোষণার পর তার বাস্তব প্রভাব ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে সময় লাগে। বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থায় সামান্য বিঘ্ন ঘটলেই মূল্যস্ফীতির আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাই বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, শক্তিশালী মনিটরিং ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিকল্প নেই। অন্যথায় ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ শুধু অতীতের স্মৃতিই হয়ে থাকবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT