জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সম্মুখসারীর যোদ্ধা হাসনাত আবদুল্লাহ আজ রাত ১টা ৪৪ মিনিটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন সম্পর্কে আশংকার কথা জানান। নিচে তা তুলে ধরা হলো:
১১ই মার্চ, সময় দুপুর ২:৩০। কিছুদিন আগে জানানো হয়েছিল যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা চলছে, যা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন, ও তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
১১ই মার্চ দুপুর ২:৩০-এ ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন সমঝোতার বিনিময়ে এই প্রস্তাব মেনে নেওয়ার জন্য। আরও জানানো হয়, ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা ভালো বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে, গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বক্তব্য দেওয়া শুরু করেছে।
এছাড়া আমাদের জানানো হয়, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে গঠন করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।
আমরা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করি এবং জানাই যে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে তাদের বিচার নিয়ে কাজ করা উচিত। এর উত্তরে বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে বাধা দিলে দেশে সংকট তৈরি হবে এবং তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে, কারণ “আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক”।
আলোচনার এক পর্যায়ে আমরা প্রশ্ন তুলি, যেই দল এখনো ক্ষমা চায়নি, অপরাধ স্বীকার করেনি, সেই দলকে কীভাবে ক্ষমা করা যায়? উত্তরে রেগে গিয়ে বলা হয়, “ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম এন্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ‘ইনক্লুসিভ’ ইলেকশন হবে না।”
আমরা জবাব দিই, “আওয়ামী লীগের সাথে কোনও ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। তাদের ফেরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে ফেরাতে হবে।” আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলি, “আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।”
অবশেষে, আলোচনা অসমাপ্ত রেখেই আমাদের চলে আসতে হয়।
জুলাই আন্দোলনের সময়েও আমাদের দিয়ে অনেক কিছু করানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কখনও এজেন্সি, কখনও বা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নানা ধরণের প্রেসক্রিপশন গ্রহণের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। আমরা ওসব চাপে নতি স্বীকার না করে জনগণের ওপরেই আস্থা রেখেছিলাম এবং তাদের সাথে নিয়েই হাসিনার চূড়ান্ত পতন ঘটিয়েছিলাম।
আজকেও ক্যান্টনমেন্টের চাপকে উপেক্ষা করে আমি আবারও জনগণের ওপরেই ভরসা রাখতে চাই। এ পোস্ট দেওয়ার পর আমার কী হবে, আমি জানি না। নানা মুখী প্রেশারে আমাকে হয়তো পড়তে হবে, হয়তো বিপদেও পড়তে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনও ধরণের আপোষের সুযোগ নেই।
জুলাইয়ের দিনগুলোতে জনগণের স্রোতে ক্যান্টনমেন্ট আর এজেন্সির সকল প্রেসক্রিপশন আমরা উড়িয়ে দিয়েছিলাম। আজ আবারও যদি জনগণের সমর্থন পাই, রাজপথে তাদের পাশে পাই, তবে আবারও এই ভারতীয় ষড়যন্ত্রও আমরা উড়িয়ে দিতে পারবো।
আসুন, সমস্ত যদি-কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেব না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোনও সুযোগ নেই, বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে।
এর আগে হাসনাত আবদুল্লাহ গত ১২ই মার্চ বিষয়টি ইঙ্গিত দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্যে সতর্ক করে পোস্ট দেন। নেটিজেনদের মাঝে হাসনাত আবদুল্লাহের পোস্ট বেশ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। অধিকাংশই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন ষড়যন্ত্রে অসন্তোষ প্রকাশ করে হাসনাত আবদুল্লাহের পোস্ট শেয়ার দিচ্ছেন। ক্যান্টনমেন্ট থেকে এ ব্যাপারে কারোর কাছ থেকে বক্তব্য এখনও জানা যায়নি।