ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের তেল আবিবের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়নে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে। হুতিদের সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘জুলফিকার’ নামের একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে বিমানবন্দরের নির্ধারিত লক্ষ্যে আঘাত হানে। হামলার পরপরই বিমানবন্দর এলাকা থেকে যাত্রী ও কর্মীদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রায় এক ঘণ্টা পুরো বিমানবন্দর এলাকায় সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ ছিল।
হামলার সময় ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে একাধিক বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়। ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ জানায়, বিস্ফোরণের কারণে একাধিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট মাঝ আকাশে দিক পরিবর্তন করে অন্যত্র অবতরণ করে। সাময়িকভাবে আকাশপথও বন্ধ রাখা হয়।
হুতিরা আরও জানায়, এই হামলা তারা গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যার জবাবে চালিয়েছে। ইয়াহিয়া সারি বলেন, গাজায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই ধরনের প্রতিরোধমূলক অভিযান চলতেই থাকবে। তিনি সতর্ক করে জানান, বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে বিমান চলাচলের ওপর আগেই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এটি উপেক্ষা করা হলে ভবিষ্যতে আরও বড় আকারের আক্রমণ চালানো হবে।
শুধু ক্ষেপণাস্ত্র হামলাই নয়, হুতিরা আরও দুটি ‘ইয়াফা’ ড্রোন হাইফা ও তেলআবিবের ‘গুরুত্বপূর্ণ শত্রু অবকাঠামো’ লক্ষ্য করেও ছুড়ে দেয়। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, মধ্য ইসরায়েলের আকাশে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তারা ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে। হামলার সময় জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় সাইরেন বাজানো হয় এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জনগণকে সতর্ক করা হয়।
এই হামলার ফলে কোনো প্রাণহানি বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বেন গুরিয়নের মতো কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলার ফলে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়বে।
এদিকে, ইসরায়েল সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই হামলার বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, গাজায় ১৮ মার্চ থেকে পুনরায় স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে হুতি বাহিনী ইসরায়েলের দিকে ৪০টির বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১০টির বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
এর আগে ১৯ মে হুতিরা হাইফা বন্দরে সামুদ্রিক অবরোধ ঘোষণা দেয় এবং জানায়, কোনো নৌযান সেখানে গেলে তা হুতিদের সামরিক লক্ষ্যবস্তু হবে। হুতিদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় আগ্রাসন ও অবরোধ বন্ধ না করা পর্যন্ত এই ধরনের পাল্টা হামলা ও সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের হামলা শুধু ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৬৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এই বর্বরতার প্রতিবাদেই ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা নিজেদের সামরিক প্রতিশোধমূলক অভিযান অব্যাহত রেখে