গাজায় আল জাজিরা সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ সহ সাত জন নিহত - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
রাকসু নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিন আজ, পরশু ভোটগ্রহণ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের কুবি শাখার নেতৃত্বে মাসুম–সাইদুল সড়ক সংস্কার ও রেলপথ চালুর দাবিতে উপাচার্য বরাবর ইবি ছাত্রদলের স্মারকলিপি প্রদান গাছের সুরক্ষায় গ্রীন ভয়েস সদস্যদের হাতে পাঁচ প্রকার সামগ্রী প্রদান করলেন অধ্যক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ভর্তি আবেদন শুরু ২৯ অক্টোবর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিক্যাল সেবার সময় রাত ৮টা পর্যন্ত বাড়ানো হলো রাবিতে নবীনবরণ: শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা বাস্তবায়নে যুক্তি ও শৃঙ্খলার আহ্বান উপাচার্যের জাবিতে প্রাণ রসায়ন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের নতুন কমিটি ঘোষণা বিদেশে নতুন আগত বাংলাদেশিদের প্রতি অমানবিক আচরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ফজলে এলাহী

গাজায় আল জাজিরা সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ সহ সাত জন নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫
  • ১১২ বার দেখা হয়েছে

গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের মূল ফটকের বাইরে সাংবাদিকদের জন্য স্থাপন করা তাবুতে রোববার গভীর রাতে ইসরায়েলি বাহিনী লক্ষ্যভিত্তিক বিমান হামলা চালায়। মুহূর্তেই ধসে পড়ে তাবুটি। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সেখানে থাকা আল জাজিরার খ্যাতিমান প্রতিবেদক আনাস আল-শরিফসহ আরও চার সাংবাদিক ও এক সহকর্মী। মোট সাতজন প্রাণ হারান সেই রাতে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন প্রতিবেদক মোহাম্মদ ক্রেইকেহ, ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম জহের, মোহাম্মদ নৌফাল ও মোআমেন আলিওয়া।

গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের বাইরে যে তাবুটি ছিল, সেখানে ইসরায়েলের বিমান হামলায় আনাস আল-শরিফসহ ছয়জন নিহত হন। ইসরায়েল হামলার দায় স্বীকার করে বলেছে, আনাস হামাসের যোদ্ধা ছিলেন—কিন্তু জাতিসংঘ এই দাবি প্রমাণহীন বলে বিবৃতি দিয়েছে। ছবি: রয়টার্স

মাত্র ২৮ বছর বয়সী আনাস আল-শরিফ বহুদিন ধরে উত্তর গাজা থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংবাদ প্রচার করছিলেন। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছিলেন, “গত দুই ঘণ্টা ধরে অবিরাম বোমাবর্ষণ… গাজার পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে ‘ফায়ার বেল্ট’ নামে তীব্র আগাগোড়া গোলাবর্ষণ চলছে।” তাঁর শেষ ভিডিওতে আকাশজুড়ে লেলিহান শিখা আর বিস্ফোরণের গর্জন ধরা পড়ে।

আনাস নিজের মৃত্যু আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন যেন। গত ৬ এপ্রিল লেখা এক শেষ বার্তায় তিনি লিখেছিলেন, “আমি বেদনার প্রতিটি খুঁটিনাটি জানি, শোক আর হারানোর স্বাদ বহুবার পেয়েছি। তবুও সত্যকে বিকৃত না করে তুলে ধরতে কখনো দ্বিধা করিনি। আশা করেছিলাম, আল্লাহ দেখবেন তাঁদের, যারা নীরব থেকেছেন, যারা আমাদের হত্যাকে মেনে নিয়েছেন, যারা আমাদের শ্বাস রুদ্ধ করেছেন। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের শিশু ও নারীদের ছিন্নভিন্ন দেহও তাদের হৃদয় নরম করতে পারেনি, থামাতে পারেনি এই হত্যাযজ্ঞ।” তিনি স্ত্রী বায়ানকে ছেড়ে আসার কষ্ট আর সন্তান সালাহ ও মেয়ে শামের বড় হওয়া না দেখার আক্ষেপও প্রকাশ করেছিলেন।

এই হামলার পর আল জাজিরা এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর আরেকটি স্পষ্ট ও পরিকল্পিত আঘাত। বিবৃতিতে বলা হয়, গাজার দখল ও নিয়ন্ত্রণ প্রকাশে সাহসী কণ্ঠগুলোকে স্তব্ধ করার মরিয়া চেষ্টা হিসেবে আনাস ও তাঁর সহকর্মীদের হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নেটওয়ার্কটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গণহত্যা বন্ধ ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে হত্যার অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, আনাস হামাসের একটি সেলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এবং ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক ও সেনাদের ওপর রকেট হামলায় যুক্ত ছিলেন। তাদের দাবি, এ বিষয়ে অবিসংবাদিত প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ও আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলো এই অভিযোগকে প্রমাণহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে নাকচ করেছে। ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের বিশ্লেষক মোহাম্মদ শেহাদা বলেছেন, “তাঁর হামলায় অংশ নেওয়ার শূন্য প্রমাণ আছে। তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে খবর প্রচার করতেন।”

আল জাজিরা জানায়, আনাসকে আগেও ইসরায়েলি বাহিনী ও তাদের প্রচারযন্ত্র মিথ্যা অভিযোগে হামাসের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযুক্ত করেছে এবং এর মাধ্যমে তাঁকে টার্গেট করেছে। গত মাসে কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক আইরিন খানও বলেছিলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর পুনঃপুন হুমকি ও অভিযোগ প্রমাণ ছাড়াই সাংবাদিকদের হত্যা করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

আনাসের জীবনের ট্র্যাজেডি শুরু হয়েছিল আরও আগে। ডিসেম্বর ২০২৩-এ ইসরায়েলি হামলায় তাঁর নিজের বাড়ি ও অফিস ধ্বংস হয় এবং তিনি তাঁর বাবাকে হারান। তবুও তিনি পিছু হটেননি, প্রতিদিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে গাজার বাস্তবতা তুলে ধরেছেন বিশ্বের সামনে।

অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০০-র বেশি সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একাধিক আল জাজিরা সাংবাদিক ও তাঁদের স্বজনও রয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, গাজার সাংবাদিকদের হামাসের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযুক্ত করে ইসরায়েল তাদের হত্যাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

আনাস আল-শরিফের মৃত্যু শুধু একজন সাংবাদিকের হারানো নয়, এটি সত্য বলার অধিকার ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ওপর এক ভয়াবহ আক্রমণ। তাঁর শেষ মুহূর্তের শব্দগুলো এখন গাজার আকাশে প্রতিধ্বনিত হয়—যেন মনে করিয়ে দেয়, যুদ্ধের অন্ধকারে সবচেয়ে উজ্জ্বল আলোও কখনো নিভে যেতে পারে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT