আল হাইয়াতুল উলয়া ২০২৫ পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:

আল হাইয়াতুল উলয়া ২০২৫ পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ

আবদুল্লাহ আল মাহমুদ
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৫৫ বার দেখা হয়েছে
হাইয়াতুল উলয়া পরীক্ষা ২০২৫-এর পর্যালোচনা, ছবি: ফেসবুক
হাইয়াতুল উলয়া পরীক্ষা ২০২৫-এর পর্যালোচনা, ছবি: ফেসবুক

আমি নিজের কোন লেখা শেয়ার দিতে বলি না, কিন্তু আমি চাই এই লেখাটা বড়দের নজরে পড়ুক। তার এই চার্টগুলো দেখে আমাদের কওমি শিক্ষাব্যবস্থার ফাঁকিগুলো ধরতে পারুক। অন্তত আমাদের তরুণ প্রজন্ম সক্রিয় হোক।

আল হাইয়াতুল উলয়া কওমি মাদরাসার চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় শিক্ষার একমাত্র শিক্ষাধারা হিসেবে আমাদের এই শিক্ষাক্রমে কেমন যোগ্য ধর্মীয় প্রতিনিধি আমরা তৈরি করছি তা বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড এই ফলাফল। তাই ঈদের ছুটিতে ভাবলাম এই ফলাফলের একটি বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।

সাধারণত বোর্ডগুলোতে পাশের হার ফলাও করে প্রচার করা হয়, কিন্তু এই পাশের হারের ভেতর যে কিছু শুভঙ্করের ফাঁকি থেকে যায়, তা যাচাই করে দেখার ফুরসত মেলে না। সেই জন্য এই চার্টগুলো তৈরি করে দেখানোর চেষ্টা নিলাম। সাধারণত একটি শিক্ষাক্রমে গড়ে ৬০ পার্সেন্টের বেশি নাম্বার যে ছাত্ররা পেয়ে থাকে, তাদেরকে যোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। এটাকে আরও ন্যারো করার জন্য স্কুলে ৬০ ও ৮০ মাঝে ৭০ এ আরেকটি বিভাগ দেয়া হয়, কিন্তু মাদরাসায় এই দুইয়ের মাঝামাঝি কোন বিভাগ নেই। ফলে ৬০ ও ৭৯ পাওয়া দুজন ছাত্র একই ক্যাটাগরিতে অবস্থান করে, যা অযৌক্তিক বটে। তবু আমরা এই বিশ্লেষণে ৬০% এর বেশি নম্বর পাওয়া ছাত্রদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যোগ্য বলে ধরে নিচ্ছি। আরেকটি বিষয় বিবেচনায় রাখা উচিত। বেফাক বোর্ডের নিয়ম হচ্ছে যদি কোন ছাত্রের খাতায় ২৫ নম্বর থাকে, তাহলে তাকে পাশ করিয়ে দেয়া হয়, আল হাইয়াতুল উলয়া -ই কি একই নিয়ম আছে কিনা আমার জানা নেই।

এবারে যদি আমরা প্রথম ছবিটিতে লক্ষ করি, তাহলে দেখব প্রায় ৩৩ হাজার ছাত্রের মধ্যে ভাল ছাত্রের সংখ্যা মাত্র ২২ পার্সেন্ট, মানে প্রতি চারজনে একজনেরও কম। অবশ্য এই পার্সেন্টেজে ছেলেদের পরিমাণ অনেকখানি, এ কারণে যখন আমরা লিঙ্গভিত্তিক ফলাফলে যাই, তখন দেখব ছেলেদের মধ্যে যোগ্য ছাত্রের পরিমাণ ৩২ পার্সেন্ট বা প্রতি তিনজনে একজন। আর মেয়েদের মধ্যে এই পরিমাণ মাত্র ১২ পার্সেন্ট বা প্রতি দশ জনে একজন। সবচাইতে আতংকের বিষয় হচ্ছে এই যোগ্য ছাত্রের পরিমাণ বছর বছর কমছে। যেমন ছাত্রদের মধ্যে ২০২৪ সালে যোগ্য ছাত্রের পরিমাণ ছিল ৩৮ পার্সেন্ট, যেটা এই বছর কমে দাড়িয়েছে ৩২ পার্সেন্টে, মেয়েদের ক্ষেত্রে গত বছর যা ছিল ১৬ পার্সেন্ট, এ বছর কমে দাঁড়িয়েছে ১২ পার্সেন্টে।

প্রশ্ন হচ্ছে এই নম্বরগুলো আমাদের কী বলছে? এই ধরণের ফলাফলের অর্থ হচ্ছে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অযোগ্য ছাত্রদেরকে আমরা মাওলানা টাইটেল দিয়ে সমাজে ছেড়ে দিচ্ছি, যারা জনগণের আধ্যাত্মিক রাহবার হিসেবে বিভিন্ন মসজিদে আসীন হচ্ছে। আমাদের সমাজে মেধাবি ছাত্রদের মাদরাসায় পাঠানো হয় না, মানুষ এই ধারার শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিতে আগ্রহী নয়, সবই সত্য। কিন্তু যে ছাত্ররা আমাদের হাতে আছে, তাদেরকে কি আমরা পর্যাপ্ত যোগ্য করে তুলছি? বিষয়ভিত্তিক দক্ষ জনবল কি আমরা তৈরি করতে পারছি?

একটা ক্লাসের মধ্যে যদি তিরিশ জন ছাত্র থাকে, তার অর্ধেক কি দেখে দেখে বিশুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারে? আমার যতটুকু অভিজ্ঞতা, তাতে যে ছাত্র গড়ে ৬০ এর নিচে নাম্বার পায়, সে আরবি দেখে দেখে পড়তে পারে না। সে একটা হাদিস পড়ে তার তরজমা করতে পারবে না, একটা মাসআলা ফতোয়ার কিতাব ঘেটে বের করতে পারবে না, একটা তাফসিরের ব্যাখ্যা খুঁজে বের করতে পারবে না। এহেন অযোগ্য ছাত্রদেরকে সমাজে মানুষের ধর্মীয় সেবা দেয়ার জন্য ছেড়ে দেয়া অপরাধ না?

যে কোন ধরণের উন্নতির কথা বললে আমাদের মুরুব্বিরা বাধ সাধেন, তারা বলেন নাম্বার না মাকবুলিয়াত আসল। যে ছেলে দেখে দেখে আরবি পড়তে পারে না, তার মাকবুলিয়াত দিয়ে আমরা কী করব? এর চাইতে ভাল ছিল না, যে তিন ভাগের একভাগ ছাত্র ভাল, তাদেরকে ভাল শিক্ষক, ভাল সিস্টেম, ভাল পরিবেশ দিয়ে যোগ্য আলেম বানিয়ে তোলা, যেন তারা ভবিষ্যতে ইসলামের হাল ধরতে পারে, সমাজে বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান রাখতে পারে। যে ছাত্রগুলো দাওরায়ে হাদিসে গড়ে ৫০ এর নিচে নাম্বার পাচ্ছে, তারাও দিনশেষে মাওলানা, যে ৯৩.পাচ্ছে সেও মাওলানা। ক্ষেত্রবিশেষে সেই কম যোগ্যতাধারী ছেলে একটা মাদরাসা খুলে মুহতামিম হচ্ছে, আর সেই মাদরাসায় ৮০ পাওয়া ছাত্র শিক্ষকতা করছে।

আমাদের এই সিস্টেমের সবচেয়ে বড় সমস্যা কোন একজিট পয়েন্ট না থাকা, যে ছেলেগুলো অযোগ্য, কম মেধার অধিকারী, তাদেরকে বাড়তি পাঁচ বছর পড়ানোর দরকার নেই, কাফিয়ার পরেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হোক। পর্যাপ্ত দ্বীনি ইলম নিয়ে সে দুনিয়ার কোন একটা যোগ্যতা হাসিল করে জীবিকার সন্ধানে নেমে যাক। যারা যোগ্য তারা ভাল শিক্ষকের কাছে যোগ্যতাকে আরও শাণিত করুক।

লেখক: আবদুল্লাহ আল মাহমুদ

  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT