এখনো প্রিপ্রিন্ট অবস্থায় থাকা এই গবেষণাপত্রে অংশগ্রহণকারীদের তিনটি দলে ভাগ করে লেখা দিতে বলা হয়:
১. যারা চ্যাটজিপিটির মতো বড় ভাষাগত মডেল (এলএলএম) ব্যবহার করেছে
২. যারা গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে
৩. যারা কোনো টুল ছাড়াই শুধুমাত্র নিজের মস্তিষ্ক ব্যবহার করে লিখেছে
ফলাফল ছিল প্রত্যাশিত এবং গভীরভাবে চিন্তা করার মতো।
এলএলএম ব্যবহারকারীদের লেখা ছিল প্রায় একই রকম—কম বৈচিত্র্যময় ও কম ব্যক্তিকেন্দ্রিক। তাদের ব্রেইন স্ক্যান দেখিয়েছে, লেখার সময় মস্তিষ্কের সংযোগ সবচেয়ে কম ছিল। অর্থাৎ, তারা চিন্তা না করে ‘ডেলিগেট’ করছিল।
সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীরা মাঝামাঝি অবস্থানে ছিল। তারা নিজেরা চিন্তা করলেও অনেকটা তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিল। আর যাঁরা কেবল নিজের ব্রেইন ব্যবহার করে লিখেছেন, তাঁদের লেখায় ছিল মৌলিকতা, স্বকীয়তা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—তাঁদের মস্তিষ্কে তৈরি হয়েছিল সবচেয়ে বেশি নিউরাল কানেকশন।
এই নিউরাল কানেকশন কী? এটা বোঝাতে একটা পুরোনো উদাহরণ দেওয়া যায়।
নিউরোসায়েন্সের পথিকৃৎ মারিয়ান ক্লিভস ডায়মন্ড আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ওপর গবেষণা করেছিলেন। তিনি মাইক্রোস্কোপে দেখতে পান, আইনস্টাইনের ব্রেইনে ছিল প্রচুর গ্লিয়াল কোষ—যা নিউরোনের মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে। বেশী গ্লিয়াল কোষ মানে—বেশি সংযোগ, বেশি চিন্তাশক্তি।
আইনস্টাইন এই শক্তি তৈরি করেছিলেন নিয়মিত ‘মেন্টাল ওয়ার্কআউট’-এর মাধ্যমে। তিনি জেনারেল রিলেটিভিটি প্রমাণ করতে গিয়ে রিম্যানিয়ান জিওমেট্রি শিখেছিলেন, যা ছিল সম্পূর্ণ নতুন একটি শাখা। অর্থাৎ, নিয়মিত শেখা, চিন্তা ও গভীর মনোনিবেশই আমাদের মস্তিষ্কের প্রকৃত শক্তি।
এখন প্রশ্ন—চ্যাটজিপিটি বা অনুরূপ এআই দিয়ে লিখে সহজে ফাইনাল আউটপুট পাওয়া যায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা আমাদের চিন্তাশক্তিকে কি ক্ষয় করছে?
গবেষণাটি জানাচ্ছে, চার মাসের চারটি সেশনে এলএলএম ব্যবহারকারীরা সব দিকেই পিছিয়ে ছিল—নিউরাল সংযোগ, ভাষাগত স্কোর এমনকি নিজেদের লেখার উপর নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও। অনেকে জানতেই পারেননি তাঁরা কী লিখেছেন—উদ্ধৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এর মানে দাঁড়ায়, শুরুতে এআই পারফরম্যান্স বুস্ট দিলেও ধীরে ধীরে তা আমাদের ব্রেইনকে এক নিষ্ক্রিয় যন্ত্রে পরিণত করতে পারে—যা কেবল ক্লিক করে চলে, কিন্তু চিন্তা করে না।
আমাদের উচিত প্রযুক্তিকে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা, মূল চালক হিসেবে নয়। লেখার সময় এআইকে ‘সহকারী’ বানানো ঠিক আছে কিন্তু লেখক হওয়া চাই নিজেরই।
তথ্যসূত্র
-
Natalia Kosmina, MIT Media Lab, 2025 (Preprint paper)
-
Diamond, M. C. (1985). Enriching Heredity: The Impact of the Environment on the Anatomy of the Brain
-
“Einstein’s brain had more glial cells than average” – Smithsonian Magazine