ব্যাংকিংয়ে সুদ নিষিদ্ধ, নতুন দিগন্তে আফগানিস্তান - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:

ব্যাংকিংয়ে সুদ নিষিদ্ধ, নতুন দিগন্তে আফগানিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
  • ২০ বার দেখা হয়েছে

আফগানিস্তান অর্থনৈতিক খাতের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। ২০২১ সালে তালেবান সরকারের ক্ষমতায় ফেরার পর সুদভিত্তিক আর্থিক কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করা হয়। শুরু থেকেই এই নীতির কারণে দেশটির ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এক সময় যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সুদ নির্ভর ছিল, আজ তা ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের রূপ নিচ্ছে। এখন আফগানিস্তানের প্রায় সকল ব্যাংক শরিয়াহ পরিপালনে বিশেষজ্ঞ পরামর্শক নিয়োগ করে ইসলামী অর্থনীতির মূলনীতি মেনে মুদারাবা, মুশারাকা, মুরাবাহা ও ইজারাভিত্তিক লেনদেনে গুরুত্ব দিচ্ছে। এতে দেশের জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও ধর্মীয় আস্থার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কাবুলে দ্যা আফগানিস্তান ব্যাংক ও তুর্কি অংশীদারি ব্যাংক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় দেশের ব্যাংক কর্মকর্তাদের ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মৌলিক নীতি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও শরিয়াহ সম্মত আর্থিক পণ্য নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। উদ্বোধনী আয়োজনে ডা আফগানিস্তান ব্যাংকের উপগভর্নর সাদিকুল্লাহ খালিদ হাফিযাহুল্লাহ ঘোষণা করেন, আফগানিস্তানে এখন সুদভিত্তিক কোনো ব্যাংকিং লেনদেন নেই। সবকিছু শরিয়াহ মোতাবেক চলছে। এরপর ২০২৫ সালের এপ্রিলে বালখ প্রদেশে এক গণসম্মেলনে তিনি ঘোষণা দেন, ইসলামী ব্যাংকিং খাতকে আরও শক্তিশালী করতে ডা আফগানিস্তান ব্যাংকের অধীনে চালু করা হয়েছে আফগানিস্তান ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স।

২০২৫ সালের ৩ জুন থেকে এ প্রতিষ্ঠানটি ইসলামী ব্যাংকিং, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ডিজিটাল লেনদেন, মাইক্রোফাইন্যান্স ও আন্তর্জাতিক আর্থিক মানদণ্ড অনুযায়ী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নতুন এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেশজ অর্থনীতিকে সুসংগঠিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংকিং সেবা শহরকেন্দ্রিক না রেখে গ্রামাঞ্চলে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বেড়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা সুদমুক্ত বিনিয়োগ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানে ৩০ হাজারের বেশি মুরাবাহা ভিত্তিক ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যার ৪২ শতাংশ গ্রহণ করেছেন নারী উদ্যোক্তারা।

একই সময়ে দেশজ ব্যাংকিং খাতের ডিজিটাল অবকাঠামোও উন্নত হয়েছে। ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ব্যাংক শাখার সংখ্যা ৩৬৯ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৯০টি। এটিএমের সংখ্যা বেড়েছে ৬০ শতাংশ এবং পিওএস মেশিনের সংখ্যা বেড়েছে ৬ শতাংশ। ফলে, সাধারণ মানুষ সহজেই ইসলামী লেনদেনের সুবিধা পাচ্ছেন। এতে শুধু আর্থিক লেনদেন নয়, দেশের বাজার ব্যবস্থাপনা ও ক্ষুদ্র ব্যবসার পরিধিও বাড়ছে।

আফগানিস্তানের এই ইসলামী ব্যাংকিং বিপ্লব শুধু অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় সীমাবদ্ধ নয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিজেদের ব্যাংকিং কাঠামো সাজানোর জন্য আফগানিস্তান মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং ইউএই-র অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তুর্কি অংশীদার ব্যাংক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন সাদিকুল্লাহ খালিদ।

তবে, এই উন্নয়নের পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। দেশের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং বৈদেশিক রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় সীমাবদ্ধতা থাকায় আফগানিস্তানের ব্যাংকিং খাত এখনও আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংকিং নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারছে না। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নূর আহমদ আগা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই সংকটও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

সব মিলিয়ে ইমারতে ইসলামিয়া সরকারের শাসনে সুদমুক্ত অর্থনীতি গঠনে ইসলামী ব্যাংকিং খাত এখন আফগানিস্তানের আর্থিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় জীবনে নতুন সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। শহর থেকে গ্রাম, নারী থেকে পুরুষ — সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এখন শরিয়াহভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্ত হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আফগানিস্তান শুধু ইসলামী ব্যাংকিং নয়, সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায়ও আন্তর্জাতিকভাবে একটি আলাদা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এই রূপান্তর ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক ইসলামী অর্থনীতিবিদদের নজর কেড়েছে। অনেকেই একে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার জন্য মডেল হিসেবে বিবেচনা করছেন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT