
মানিকগঞ্জের বাউল শিল্পী আবুল সরকার (যে “ছোট আবুল” নামেও পরিচিত) ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনা গত কিছু দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং ধর্মসংগঠনগুলো তার কঠোর শাস্তি দাবি করছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় ৪ নভেম্বর, যখন ঘিওর উপজেলার জাবরা বাজারে এক পাগলীর (খালা পাগলীর) উরস ও মেলা অনুষ্ঠানে আবুল সরকার একটি গান পরিবেশন করছিলেন। ওই পারফরম্যান্সে, তার ভাষণ থেকে এমন মন্তব্যগুলি ছড়িয়ে পড়ে, যা একাংশের মতে ইসলাম ও আল্লাহর সৃষ্টিকে নিয়ে কটূ ব্যাখ্যার মতো।
ম্যাট্টা দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ভিডিও ছড়িয়ে পরে। অনেকেই বাউল শিল্পীর ওই কথোপকথনকে “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত” হিসেবে দেখেন। স্থানীয় ধর্মগুরুদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায় এবং তাদের পক্ষ থেকে শাস্তির দাবি ওঠে।

এর প্রেক্ষিতে মুফতি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, ঘিওর বাজার মসজিদের ইমাম, ঘিওর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ করা হয়েছে, আবুল তার পারফরম্যান্সে কোরআনের আয়াত ভুলভাবে উচ্চারণ করেছেন, ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং “আল্লাহর সৃষ্টিকে নেন” এমন মন্তব্য করেছেন, যা ধর্মমতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর হিসেবে ধরা হচ্ছে।
২০ নভেম্বর ভোরে, মানিকগঞ্জ জেলার গোয়েন্দা শাখা (DB) পুলিশের একটি দল মাদারীপুরে একটি সঙ্গীত অনুষ্ঠানে আবুল সরকারকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করার পর তাকে মানিকগঞ্জে আনা হয় এবং পরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয় এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ঘটনাটি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিবাদের ঝড়োয়ালে পরিণত হয়। আদালতের বাইরে ধর্মগুরু, আলেম ও সাধারণ মানুষ মানববন্ধন করে এবং বিক্ষোভ মিছিল আয়োজিত করে। তাদের দাবি — শিল্পীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং তার মন্তব্যের সামাজিক প্রভাব ও দায়বোধ মূল্যায়ন করা হবে।
অন্যদিকে, আবুল সরকারের সহকারী শিল্পী রাজু সরকার দাবি করেছেন যে পুরো সত্যি তুলে ধরা হচ্ছে না; তার মতে, শুধুমাত্র নির্বাচিত অংশ (ভিডিও ক্লিপ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এবং পুরো প্রসঙ্গকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আবুল পীর হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন নি বরং প্রতিদ্বন্দ্বী বাউল শিল্পীর সঙ্গে আলাপ–বিতর্কে “কোনটি সৃষ্টি আগে এসেছে” এই ধরনের দার্শনিক প্রশ্ন তুলেছিলেন।
মানিকগঞ্জ পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে মামলাটি বর্তমানে গহির থানা পুলিশ এবং ডিবি-এর নিরীক্ষাধীন। তদন্ত চলছে এবং তারা পরবর্তী আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।