সায়ন্তন সৈকত রায়ের চোখে 'প্রগতিশীলদের' ধর্মের অপব্যবহার - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ভর্তি আবেদন শুরু ২৯ অক্টোবর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিক্যাল সেবার সময় রাত ৮টা পর্যন্ত বাড়ানো হলো রাবিতে নবীনবরণ: শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা বাস্তবায়নে যুক্তি ও শৃঙ্খলার আহ্বান উপাচার্যের জাবিতে প্রাণ রসায়ন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের নতুন কমিটি ঘোষণা বিদেশে নতুন আগত বাংলাদেশিদের প্রতি অমানবিক আচরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ফজলে এলাহী সাবেক সেনাকর্মকর্তার জবানিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর প্রকৃত চিত্র কাতার–সৌদি মধ্যস্থতায় পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত ‘আপাতত স্থগিত’ করল আফগানিস্তান পাকিস্তান আবারও আফগান সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করলে আফগান বাহিনী জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত বালিয়াকান্দিতে টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন

সায়ন্তন সৈকত রায়ের চোখে ‘প্রগতিশীলদের’ ধর্মের অপব্যবহার

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৬০ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং প্রগতিশীলতা দুটি বহুল আলোচিত শব্দ হলেও, একজন দেশপ্রেমিক ও সচেতন বাংলাদেশি হিন্দুর দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধারণার প্রয়োগ নিয়ে গভীর অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন লেখক সায়ন্তন সৈকত রায়। তার ফেসবুক পোস্টে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে দেখিয়েছেন যে, সমাজে হিন্দু বিদ্বেষ বৃদ্ধিতে চিরাচরিত উগ্র ধর্মান্ধদের পাশাপাশি তথাকথিত ‘কালচারাল মারানো প্রগতিশীলদের’ হিস্যাও কোনো অংশে কম নয়। তার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই প্রগতিশীল গোষ্ঠী নিজস্ব সুবিধা এবং রাজনৈতিক ‘পারপাজ সার্ভ’ করার জন্য ধর্মীয় সংস্কৃতিকে একটি ‘ট্যাগের রাজনীতি’ এবং ‘হিপোক্রেসি’-র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ হিন্দুদের বিপন্নতাকেই বাড়িয়ে তুলছে।

সায়ন্তন সৈকত রায় তার পোস্টে তথাকথিত প্রগতিশীলদের একটি নির্দিষ্ট ‘গুড হিন্দু’ এবং ‘গুড মুসলিম’-এর ছাঁচে ফেলার প্রবণতাকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন। তার মতে, প্রগতিপাড়ার কাছে ‘গুড হিন্দু’ হতে হলে একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিতে হবে। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, একজন হিন্দুকে বন্ধুদের সাথে নির্দ্বিধায় গরুর মাংস খেতে হবে, হিন্দু মেয়েদের পার্টির অহিন্দু ছেলেদের সাথে প্রেম করতে হবে এবং সুকুমার রায়ের ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’-এর মতো করে নিজেদের ইষ্ট ও দেব-দেবীকে নিয়ে রঙ্গতামাশা করতে হবে। ঠিক একই মানদণ্ডে, ‘গুড মুসলিম’ হতে হলে একজন মুসলিমকে মণ্ডপ ভিজিট করে প্রতিমার সাথে ছবি তুলতে হবে, গানবাজনা শুনতে হবে, মেয়ে হলে শাড়ি-টিপ পরতেই হবে এবং নিজেদের ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কুমন্তব্য করতে হবে। এই ধরনের আচরণকে তিনি ‘নাকউঁচু ভাবের ট্যাগের রাজনীতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন, যা মানুষের স্বকীয়তা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে উপেক্ষা করে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই প্রগতিশীলতার ছদ্মবেশে ধর্মীয় বিশ্বাস বিসর্জন দিয়ে ‘মানুষ’ হওয়া আসলে এক ধরনের ভণ্ডামি (হিপোক্রেসি)।

পোস্টটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সায়ন্তন সৈকত রায় দেখিয়েছেন কীভাবে প্রগতিশীল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীগুলো হিন্দুদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নিজস্ব উদ্দেশ্যে ‘হাইজ্যাক’ করছে। তিনি উদাহরণ টেনে প্রশ্ন করেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার বিভাগের কী প্রয়োজন আছে ‘বরণডালা’-য় প্রদীপ জ্বালিয়ে ও ঢোল বাজিয়ে নবীনদের বরণ করার? তিনি উল্লেখ করেন, বরণ করার এই সংস্কৃতি হিন্দুরা সাধারণত সন্তান জন্ম, নতুন বউ বা অতিথি আগমন, এমনকি গরু কেনার মতো পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহার করে। এই সংস্কৃতি যখন ধর্মীয় প্রেক্ষাপট থেকে আলাদা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ধর্মনিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্মে ‘উৎসবের লেবাস’ ধরে হাইজ্যাক করা হয়, তখন সমাজে ভুল বার্তা যায়।

একইভাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছেলেমেয়েরা কী বুঝে দোল উৎসবের সময় রং খেলা বা দীপাবলির সময় প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রোগ্রাম করে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনেক সময় মন্দিরে না গিয়েও এসব অনুষ্ঠানে ভিড় করে—সেই প্রশ্ন তিনি তোলেন। তার মতে, সাধারণ মুসলিমরা যখন এই ধরনের কর্মকাণ্ড দেখে, তখন তারা ভাবে যে তাদের ধর্মকে সঙ্কটে ফেলা হচ্ছে এবং এর ফলে উগ্রবাদীদের জন্য “হিন্দুরাই দায়ী”—এরকম একটি বিদ্বেষমূলক বয়ান সৃষ্টি করা সহজ হয়। এই সাংস্কৃতিক হাইজ্যাকের মাধ্যমে সাধারণ হিন্দুদের বিপন্নতা বেড়ে যায়, কারণ সাধারণ হিন্দুদের সাথে এসব ‘প্রগতিপাড়ার’ কর্মকাণ্ডের কোনো সম্বন্ধই নেই। এভাবে প্রগতিশীলরা নিজেদের রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক পারপাজ সার্ভ করতে গিয়ে না জেনে বা জেনেশুনে উগ্রবাদীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে।

প্রগতিশীলদের ধর্মীয় বিদ্বেষ উস্কে দেওয়ার পাশাপাশি, সায়ন্তন সৈকত রায় দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান—বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে—অপমান করার প্রবণতা নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি অত্যন্ত সচেতনভাবে উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হলো দেশের শৌর্যের প্রতীক এবং এটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার উদাহরণ। তিনি যশোরের সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা হওয়ার পর সেনাবাহিনীই সেখানে ঘর তুলে দেয় ও আর্থিক সাহায্য করে। এই ইতিবাচক প্রেক্ষাপট থাকা সত্ত্বেও, তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন যে কীভাবে কেউ ‘হিন্দুধর্মীয় উপাদান ব্যবহার করে সেনাবাহিনীকে অবমাননা করা এমন চিত্র আঁকতে পারে’।

তিনি মনে করেন, পাহাড়ের রাজনীতি এতই জটিল যে সেখানে ইন জেনারেল মন্তব্য করার সুযোগ নেই (হুমায়ুন আজাদ ও আহমদ ছফার বিতর্কের উল্লেখ করে)। এই জটিল প্রেক্ষাপটে, ধর্মীয় উপাদান ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর মতো একটি জনসমর্থিত প্রতিষ্ঠানকে অবমাননা করার অর্থ হলো—প্রগতিশীলরা তাদের নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করতে পারে। তিনি ‘earki’ পেজের উদাহরণ টেনে দেখান যে, তারা একদিকে যেমন একটি নির্দিষ্ট ছবি প্রমোট করে, তেমনি অন্যদিকে দেবী দুর্গাকে নিয়েও ইয়ার্কি করেছে। এই পেজ বা প্রগতিশীলদের কাছে হিন্দু বা মুসলিম ভাবাবেগ কোনো কিছুর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই, এখানে কেবল ‘স্বার্থ হাসিল’ই শেষ কথা।

প্রতিবেদনের শেষে, সায়ন্তন সৈকত রায় অত্যন্ত মানবিক এবং দেশপ্রেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে আন্তঃধর্মীয় যোগাযোগের প্রকৃত মানদণ্ডটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মানুষের ভালো-মন্দের বিচার ধর্মীয় আচার-আচরণের ভিত্তিতে হওয়া উচিত নয়। তিনি ঢাকা মেডিকেলের একটি উদাহরণ দেন, যেখানে তার পরিবারের অনুপস্থিতিতে মুসলিম সহকর্মীরা তাকে জ্বর-পট্টি দিয়েছেন এবং বেড ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন করেন, সেই মানুষগুলো যদি কোনোদিন পূজামণ্ডপ ঘুরতে না আসে বা প্রসাদের নাড়ু না খায়, তবে কি তারা ‘খারাপ’, ‘উগ্রবাদী’, বা ‘পাকিস্তানপন্থী’?

উল্টোভাবে, তিনি বলেন যে যে সনাতন ধর্মাবলম্বী তাকে পরীক্ষায় নির্দ্বিধায় সাহায্য করেন বা বোনের রক্তের প্রয়োজনে রাত দুইটায়ও দৌড়ে যান, তিনি যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চুপচাপ থাকেন বা প্রতিমা ভাঙার প্রতিবাদ করেন—তাহলে কি তিনি ‘খারাপ’, ‘উগ্রবাদী’, বা ‘ভারতপন্থী’? তার মতে, এই ধরনের ট্যাগের রাজনীতি ভেঙে দেওয়া উচিত। তিনি আহ্বান জানান, প্রগতিপাড়ার দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে নিজেদের স্পেশাল ভাবার মোহনিদ্রা থেকে সবাইকে জাগতে হবে। তিনি চান, নিজ নিজ স্বকীয়তা বজায় রেখেই আন্তর্ধর্মীয় যোগাযোগ বৃদ্ধি পাক। মানুষ বুঝুক, হিন্দুও একটা রক্তমাংসের মানুষ, মুসলিমও একটা রক্তমাংসের মানুষ। তিনি বলেন, খিচুড়ি না পাকিয়েও ঠিক রাখা যায় সবকিছু।

সায়ন্তন সৈকত রায়ের এই বিশ্লেষণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম ও সংস্কৃতির ব্যবহার নিয়ে একটি সমালোচনামূলক এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। এটি তথাকথিত প্রগতিশীলতার ছদ্মবেশে থাকা সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর মুখোশ খুলে দিয়েছে এবং সাধারণ সংখ্যালঘুদের তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে উৎসাহিত করেছে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT