পাকিস্তান-আফগানিস্তানের ভাঙা সম্পর্কে জোড়া দিতে পারবে চীন? - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
রাকসু নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিন আজ, পরশু ভোটগ্রহণ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের কুবি শাখার নেতৃত্বে মাসুম–সাইদুল সড়ক সংস্কার ও রেলপথ চালুর দাবিতে উপাচার্য বরাবর ইবি ছাত্রদলের স্মারকলিপি প্রদান গাছের সুরক্ষায় গ্রীন ভয়েস সদস্যদের হাতে পাঁচ প্রকার সামগ্রী প্রদান করলেন অধ্যক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ভর্তি আবেদন শুরু ২৯ অক্টোবর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিক্যাল সেবার সময় রাত ৮টা পর্যন্ত বাড়ানো হলো রাবিতে নবীনবরণ: শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা বাস্তবায়নে যুক্তি ও শৃঙ্খলার আহ্বান উপাচার্যের জাবিতে প্রাণ রসায়ন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের নতুন কমিটি ঘোষণা বিদেশে নতুন আগত বাংলাদেশিদের প্রতি অমানবিক আচরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ফজলে এলাহী

পাকিস্তান-আফগানিস্তানের ভাঙা সম্পর্কে জোড়া দিতে পারবে চীন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫
  • ৭৫ বার দেখা হয়েছে
ত্রিদেশীয় সম্মেলনে আফগানিস্তান, চীন ও পাকিস্তান, ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পাকিস্তান
ত্রিদেশীয় সম্মেলনে আফগানিস্তান, চীন ও পাকিস্তান, ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পাকিস্তান

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের চলমান উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় ঘনিষ্ঠ মিত্র থাকলেও, বর্তমানে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। এমন পরিস্থিতিতে চীন, উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ও মিত্র হিসেবে, মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে।

পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের সম্পর্কের অবনতির পেছনে রয়েছে বেশ কিছু জটিল কারণ। ঐতিহাসিকভাবে, পাকিস্তান তালেবানকে নিজেদের কৌশলগত মিত্র হিসেবে দেখত। কিন্তু তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের পর পরিস্থিতি ভিন্ন হয়েছে। পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে প্রায়শই সামরিক সংঘাত দেখা যায় এবং পাকিস্তানের অভিযোগ, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (TTP) এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। অন্যদিকে, তালেবান সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ করে। তালেবান সরকার পাকিস্তানকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ করে, যা উভয় দেশের মধ্যে রাজনৈতিক অবিশ্বাসকে আরও গভীর করেছে। পাকিস্তান ক্রমাগতভাবে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের হুমকির মুখে রয়েছে এবং তারা মনে করে যে তালেবান সরকার এই সন্ত্রাসীদের দমন করতে ব্যর্থ হচ্ছে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। এই সমস্যাটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সবচেয়ে বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চীন এই অঞ্চলে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে আগ্রহী, কারণ এটি তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের সাথে সরাসরি যুক্ত। চীনের প্রধান লক্ষ্য হলো তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) এবং বিশেষ করে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) প্রকল্পকে সফল করা। চীনের এই বিশাল প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য ও যোগাযোগের নতুন পথ তৈরি করা। আফগানিস্তান এই প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে, কারণ এটি মধ্য এশিয়ার সাথে সংযোগ স্থাপনকারী একটি কৌশলগত অবস্থান। একটি স্থিতিশীল আফগানিস্তান চীনের জন্য এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রভাব বিস্তারের পথ সুগম করবে। চীন পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান উভয় দেশের সঙ্গেই গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছে। পাকিস্তান চীনের ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র’ এবং CPEC-এর প্রধান অংশীদার। অন্যদিকে, তালেবান সরকারও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ দেশ তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। উভয় দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় চীন একটি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার মতো সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। চীন একটি ত্রিপাক্ষিক কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যেখানে চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান নিজ নিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিচ্ছে। এই বৈঠকের উদ্দেশ্য হলো নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যাগুলোকে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা। একজন সিনিয়র পাকিস্তানি কূটনীতিকের মতে, চীন তার প্রতিবেশী কূটনীতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং এই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখা তাদের জন্য অপরিহার্য।

চীন যদি মধ্যস্থতায় সফল হয়, তবে এটি তাদের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক বিজয় হবে। এর মাধ্যমে তারা এই অঞ্চলে তাদের প্রভাব আরও সুসংহত করতে পারবে এবং CPEC-কে আফগানিস্তানে সম্প্রসারণের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে। তবে, চীনের সামনে বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে। পাকিস্তান ও তালেবানের মধ্যে যে গভীর অবিশ্বাস রয়েছে, তা দূর করা অত্যন্ত কঠিন। সামরিক ও রাজনৈতিক স্তরে এই অবিশ্বাস এতটাই ব্যাপক যে, শুধু অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নাও হতে পারে। আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, পাকিস্তান ও তালেবানের ওপর চীনের প্রভাব এখনও ‘পরীক্ষিত নয়’। চীন বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলেও, সিপেক-এর পূর্ববর্তী হতাশাজনক অভিজ্ঞতা এবং নিরাপত্তার ঝুঁকি বিবেচনা করে চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি এবং ব্যাংকগুলো আরও বিনিয়োগ করতে রাজি হবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত। এই অঞ্চলে কেবল চীনই একমাত্র শক্তি নয়। পাকিস্তানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতও আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে, যা পাকিস্তানের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ। এই বহুমুখী কূটনৈতিক সম্পর্ক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

সর্বোপরি, চীন যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে একত্রিত করতে পারে, তার সম্ভাবনা বিদ্যমান। তবে এটি কোনো সহজ কাজ হবে না। চীনের মধ্যস্থতার সফলতা নির্ভর করবে নিরাপত্তা সমস্যার সমাধান, অর্থনৈতিক প্রণোদনা এবং কূটনৈতিক বিচক্ষণতার ওপর। চীনকে এমন একটি কৌশল খুঁজে বের করতে হবে, যা পাকিস্তানের নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্বের সম্মান উভয়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। একই সাথে, উভয় দেশকেই এমন বড় আকারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, যা তাদের রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে ছাপিয়ে যেতে পারে। যদি চীন সফল হয়, তবে এটি কেবল তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের জন্য নয়, বরং এই অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে। তবে, যদি তারা ব্যর্থ হয়, তাহলে এটি এই অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

সূত্র: আল জাজিরা

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT