ভারত ও চীনে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর মার্কিন ক্রেতারা দ্রুত বিকল্প সরবরাহকারীর খোঁজে নেমেছেন। সেই সুযোগে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প নতুন করে আলোচনায় এসেছে। গত দুই সপ্তাহেই একাধিক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বাংলাদেশে অতিরিক্ত অর্ডারের প্রস্তাব দিয়েছে। এসব অর্ডারের বড় অংশই সরাসরি ভারত ও চীন থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বাংলাদেশি পোশাকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর বিপরীতে চীনা পোশাকে শুল্ক ধরা হয়েছে ৩০ শতাংশ এবং ভারতীয় পোশাকে ২৫ শতাংশ। পাশাপাশি রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির কারণে ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। তুলনামূলকভাবে কম শুল্কের কারণে বাংলাদেশ এখন মার্কিন ক্রেতাদের কাছে অন্যতম বড় বিকল্প হয়ে উঠছে।
ক্রেতাদের পাশাপাশি ভারতের বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে বাংলাদেশের শীর্ষ পোশাক প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আগ্রহ দেখাচ্ছে। একই সঙ্গে চীনা বিনিয়োগকারীরাও সরাসরি বাংলাদেশে কারখানা গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে হান্ডা গার্মেন্টস ও খাইশি গ্রুপ প্রায় ৮ কোটি ডলার বিনিয়োগে কারখানা স্থাপনের চুক্তি করেছে।
দেশের শীর্ষ রপ্তানিকারক স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ জানিয়েছেন, এক মার্কিন ক্রেতা গত বছর ৭ লাইনে উৎপাদন করালেও এবার ১৭ লাইনের সমান কাজ দিতে চাইছে। আরেকজন ক্রেতা ২০ লাইন থেকে আরও ১০-১৫ লাইনের অতিরিক্ত অর্ডার প্রস্তাব করেছে। এসব সামলাতে নতুন করে অন্তত আড়াই লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে চলতি অর্থবছরে তাদের রপ্তানি ৩৫ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশাবাদী।
স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, আগামী বসন্তে তাদের অর্ডার ৫-১০ শতাংশ এবং গ্রীষ্মে ১০-১৫ শতাংশ বাড়বে বলে ইতোমধ্যেই নিশ্চিত হয়েছে। এজন্য ওভারটাইম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ভারত ও চীন থেকে আসা অর্ডার ধরে রাখতে সরকারের নীতি সহায়তা অপরিহার্য বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে বেপজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত তারা ৩৪টি চীনা বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে, যার মধ্যে আটটি ইতিমধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এসব বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি ডলার, যেখানে পোশাক ছাড়াও ব্যাগ ও হালকা প্রকৌশল পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, সব উৎপাদক দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ক্রেতারা এখন দেখতে চাইবে ভোক্তারা কতটুকু শুল্ক সহ্য করতে পারছে। যদি বাজার স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে, তাহলে অর্ডার আরও বাড়বে।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম মনে করেন, চীনা বিনিয়োগ শুধু মূলধনই আনবে না, বরং নতুন ক্রেতা যুক্ত করবে। তবে সফল হতে হলে ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য করা, বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজ করাই হবে প্রধান শর্ত।
সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক শুল্ক পরিবর্তনের এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশি পোশাকশিল্প নতুন অর্ডারের জোয়ারে ভাসছে। তবে এই সুযোগ ধরে রাখতে হলে নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই হবে আগামী দিনের মূল পরীক্ষা।