চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অলিম্পিয়াডে (আইওএআই) দুটি ব্রোঞ্জপদক জিতে গৌরব অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২ থেকে ৬ আগস্ট আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৭৩টি দেশের ৮৬টি দল অংশ নেয়, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ডেটা বিশ্লেষণ, এবং অ্যালগরিদমভিত্তিক জটিল সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যাচাই করা হয়।
বাংলাদেশ দলের হয়ে ব্রোঞ্জপদক জয় করেছে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রিয়াসাত ইসলাম এবং সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরেফিন আনোয়ার। অলিম্পিয়াডের অফিসিয়াল ফলাফল অনুযায়ী রিয়াসাত ইসলাম ২৬৪.৯৪ পয়েন্ট এবং আরেফিন আনোয়ার ২১০.৫৯ পয়েন্ট অর্জন করে পদক নিশ্চিত করেন। একই দলে থাকা নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিসবাহ উদ্দিন ইনান অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য ‘অনারেবল মেনশন’ লাভ করেন। দলের অন্য সদস্য নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবরার শহীদও প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
কোডফোর্সেসের প্রকাশিত দেশভিত্তিক মেডেল তালিকায় বাংলাদেশ দুটি ব্রোঞ্জপদক পেয়ে ২৭তম স্থানে রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই আসরে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো প্রযুক্তি-অগ্রগামী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই বাংলাদেশ এই সাফল্য অর্জন করেছে।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদেরকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর সমাধান তৈরি, বাস্তব জীবনের তথ্য বিশ্লেষণ, প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধান, এবং জটিল লজিক্যাল ধাঁধা সমাধান করতে হয়। প্রতিটি ধাপের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সঠিক ও দক্ষ সমাধান দেওয়ার ওপর ভিত্তি করেই নম্বর দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ দলের কোচিং ও প্রস্তুতির দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অলিম্পিয়াড অ্যাসোসিয়েশন (BDAIO), যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশব্যাপী অনলাইন ও অফলাইন প্রশিক্ষণ আয়োজন করে আসছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিযোগিতার আগে কয়েক মাস ধরে শিক্ষার্থীদের কঠোর প্রশিক্ষণ, মক টেস্ট, এবং আন্তর্জাতিক মানের সমস্যা সমাধানের অনুশীলন করানো হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই পদক অর্জন প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছেন, সঠিক দিকনির্দেশনা ও প্রযুক্তি অবকাঠামো পেলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিশ্ব AI প্রতিযোগিতার শীর্ষ সারিতে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
এই সাফল্যের খবর প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণদের অভিনন্দন জানিয়েছেন নেটিজেনরা। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, “বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে এটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে” এবং “দেশের নাম বিশ্বমঞ্চে উজ্জ্বল করার জন্য তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।”