৩০ জুলাই ২০২৫
বিবৃতিতে জানানো হয়, সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের আগেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হতে পারে। তবে এর জন্য ইসরায়েলকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে, পশ্চিম তীরের দখল পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হবে এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে অগ্রগতি আনতে হবে।
স্টারমার বলেন, “ইসরায়েল ও হামাসকে এক কাতারে ফেলা যায় না। হামাসকে অবশ্যই সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে এবং গাজার প্রশাসনে তাদের আর কোনো ভূমিকাই রাখা যাবে না—এই বিষয়ে আমাদের অবস্থান অটল।”
বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন একটি শান্তি প্রস্তাব এবং গাজায় জরুরি মানবিক সহায়তা পাঠানো নিয়েও আলোচনা হয়। জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই গাজায় দুর্ভিক্ষের শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
ব্রিটেনের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সরকার নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির ইঙ্গিত দিল। এতে স্টারমার সরকারের নীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।
ইসরায়েল এ ঘোষণার তীব্র বিরোধিতা করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই সিদ্ধান্ত হামাসকে পুরস্কৃত করার নামান্তর এবং কূটনৈতিক উদ্যোগের ক্ষতি করবে। তারা অভিযোগ করে, এতে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাও ভেঙে পড়বে। উল্লেখ্য, সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি মার্চে ইসরায়েলই ভেঙেছিল।
ব্রিটেনে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত হুসাম জোমলট এই ঘোষণাকে ঐতিহাসিক ও নৈতিক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এটি বেলফোর ঘোষণার অন্যায়ের প্রতিকার এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ন্যায়বিচারের দিকে একটি অগ্রগতি হতে পারে। একইসঙ্গে গাজায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করাও জরুরি বলে তিনি মত দেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পেছনে লেবার পার্টির অর্ধেকের বেশি ব্যাকবেঞ্চ এমপিদের চাপের প্রভাবও ছিল। তাঁরা এক চিঠিতে স্টারমারকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “গাজায় সহ্য-অযোগ্য মানবিক পরিস্থিতি ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আরও দুর্দান্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। আমাদের লক্ষ্য শান্তি প্রতিষ্ঠাকে এগিয়ে নেওয়া।” তিনি জানান, যুক্তরাজ্য তার ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে মিলেই একটি আট দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে এবং ফিলিস্তিন স্বীকৃতি সেই প্রচেষ্টারই অংশ।
এর আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন। ইউরোপে এরই মধ্যে নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড ও স্পেন ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
লেবার এমপি সারাহ চ্যাম্পিয়ন বলেন, “আদর্শ সময় কখনো নাও আসতে পারে, কিন্তু এটি হতে পারে শেষ সুযোগ। যদি আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিনিদের একটি স্বীকৃত রাষ্ট্র পাওয়ার অধিকার আছে, তবে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”
আলজাজিরার বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা সমালোচনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে বলেন, স্টারমার ও ম্যাক্রোঁ দুইজনই কার্যত গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন—এত কথার পরেও তারা আসলে কী ধরনের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে চায়? শুধু পশ্চিম তীরের একটি অংশকে, নাকি পূর্ব জেরুজালেমসহ ১৯৬৭ সালের সীমানাভুক্ত একটি পূর্ণ সার্বভৌম রাষ্ট্রকে?