রাশিয়ার উপকূলে ৮.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতায় কাঁপছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশ - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে গ্রীন ভয়েসের পাঠচক্র “প্রয়াস” অনুষ্ঠিত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাদের ঢালাই ভেঙে আহত ১২ শ্রমিক, সাটারিংয়ে বাঁশ ব্যবহারের অভিযোগ রাজধানী দখলের গোপন পরিকল্পনায় গেরিলা প্রশিক্ষণ, আওয়ামী নেতাকর্মী গ্রেফতার গাজায় ত্রাণ নেওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ গেল ৭১ জনের জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউ নিয়ে কাজ করবে: মিলল গোপন প্রমাণ ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ – ভূরাজনৈতিক শঙ্কা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার যুগপৎ জাগরণ রোহিঙ্গাদের ওপর আরাকান আর্মির নির্মম নির্যাতনের তথ্য, ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ শেষ হলো বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া ‘এক্সারসাইজ টাইগার লাইটনিং-২০২৫’ পর্তুগালে ভয়াবহ দাবানল: সাতজনের মৃত্যু, বহু এলাকা পুড়েছে

রাশিয়ার উপকূলে ৮.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতায় কাঁপছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫
  • ৩৫ বার দেখা হয়েছে

রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপের উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ এক ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। স্থানীয় সময় বুধবার (৩০ জুলাই ২০২৫) সকালের দিকে সমুদ্রের তলদেশে সংঘটিত হয় ৮.৭ মাত্রার এই শক্তিশালী ভূমিকম্প, যার ফলে রাশিয়া, জাপান, হাওয়াই, আলাস্কা এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় আমেরিকাসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে জারি করা হয় সুনামি সতর্কতা।

প্রথমে ভূমিকম্পটির মাত্রা ৮.০ বলে জানানো হলেও পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) সেটিকে ৮.৭ মাত্রার বলে নিশ্চিত করে। ভূমিকম্পটির উপকেন্দ্র ছিল কামচাটকা উপদ্বীপের পেট্রোপাভলোভস্ক শহর থেকে প্রায় ১৩৬ কিলোমিটার পূর্বে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১৯.৩ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পটির উৎপত্তি এতটাই কম গভীরে হওয়ায় সুনামির সম্ভাবনা বাড়ে অনেকগুণ।

এই ভূমিকম্পের পরই কামচাটকা উপদ্বীপের কয়েকটি এলাকায় প্রায় ৩ থেকে ৪ মিটার উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়ে। সেভেরো-কুরিলস্ক শহরে ঢেউয়ের গতি ছিল সবচেয়ে বেশি। শহরটিতে জনসাধারণকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয় উঁচু স্থানে। রাশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কয়েকটি জায়গায় মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত বড় ধরনের প্রাণহানির খবর মেলেনি। দুর্গত এলাকায় জরুরি উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছে গেছে এবং আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে।

ভূমিকম্পের পরপরই হাওয়াই, আলাস্কা এবং মার্কিন পশ্চিম উপকূলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। প্যাসিফিক সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টার হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জজুড়ে “ডেস্ট্রাকটিভ ওয়েভ” বা ধ্বংসাত্মক ঢেউয়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে জরুরি বার্তা পাঠায়। হাওয়াইয়ের নাগরিকরা ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যান, চালু হয় সাইরেন। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন এবং ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যেও সতর্কতা ঘোষণা করা হয়, যদিও এসব এলাকায় ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল তুলনামূলক কম। তবে কর্মকর্তারা সমুদ্রের তীব্র স্রোত এবং আকস্মিক ঢেউয়ের ব্যাপারে সাবধান থাকতে বলেছেন।

জাপানের হোক্কাইডো অঞ্চল থেকে শুরু করে ওসাকা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকাগুলিতে দুই থেকে তিন মিটার উঁচু ঢেউ আসার আশঙ্কায় সরকারি প্রচারণা শুরু হয়। জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয় এবং রেল চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। জাপান সরকার জানিয়েছে, তারা ২০১১ সালের ভয়াবহ সুনামির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।

এই ভূমিকম্প ও সুনামি সতর্কতা কেবল রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যান্য দ্বীপদেশ—ফিলিপাইন, গوام, মার্কিন সামোয়া, ফরাসি পলিনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড, চিলি ও ইকুয়েডরেও সতর্কতা জারি হয়। ফিলিপাইনের উপকূলীয় শহরগুলোতে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয় এবং মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে তীরে ফিরিয়ে আনা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ছিল ২০১১ সালের জাপান সুনামির পর সবচেয়ে শক্তিশালী ও বিপজ্জনক এক ভূমিকম্প। যেহেতু এটি সমুদ্রের নিচে এবং খুব অগভীরে সংঘটিত হয়েছে, তাই সুনামি ঢেউয়ের সম্ভাবনা ছিল অত্যন্ত বাস্তব এবং সময় ছিল খুবই কম।

রাশিয়ার ভূতাত্ত্বিক গবেষক আন্দ্রেই সেমেনভ বলেন, “আমরা বহুদিন ধরেই কামচাটকার এই অংশে সক্রিয় টেকটোনিক প্লেটের বিষয়ে সতর্ক ছিলাম। আজকের ঘটনা সেই সতর্কতারই বাস্তব প্রতিফলন।” মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সংস্থা USGS-এর মতে, ভূমিকম্পের প্রভাব ভবিষ্যতে নতুন করে আফটারশক বা পরবর্তী ভূকম্পন তৈরি করতে পারে।

বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো জরুরি সতর্কতা জারি করে এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়। হাওয়াইয়ের গভর্নর এক বিবৃতিতে বলেন, “সতর্ক অবস্থান ও জনসচেতনতাই আমাদের প্রাণ বাঁচাতে সহায়তা করেছে।”

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় সুনামি ঢেউয়ের ভিডিও। সমুদ্রের পানির হঠাৎ টানে সরে যাওয়া এবং তারপর হঠাৎ বিশাল ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়েছেন অনেকেই।

বর্তমানে ভূমিকম্প-পরবর্তী জরুরি উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। রাশিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বাসিন্দাদের এখনো সমুদ্রের কাছাকাছি না যেতে সতর্ক করা হয়েছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসা পর্যন্ত সরকারি সতর্কতা কার্যকর থাকবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT