
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ এবং জরুরি অবস্থা জারির নিয়ম সংশোধন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংলাপ শেষে এ তথ্য জানান।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১২তম দিনে এসব বিষয়ে একমত হন নেতারা। কমিশনের ভাষ্যমতে, এসব সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ হিসেবে বিবেচিত হবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “আজকের সংলাপে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। আগেই ৯৫ অনুচ্ছেদের সংশোধন নিয়ে নীতিগত সম্মতি হয়েছিল, এবার তা আরও নির্দিষ্ট আকার পেয়েছে।”
ঐকমত্য অনুযায়ী:
রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগ থেকে জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করবেন।
নির্বাচনে জয়ী দল বা জোট চাইলে আপিল বিভাগের দুইজন জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির মধ্য থেকে একজনকে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে পারবে।
যদি কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে ৯২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তদন্ত চলমান থাকে, তবে তাঁকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
আলোচনায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণার অপব্যবহার ঠেকাতে সংবিধানের ১৪১(ক) অনুচ্ছেদ সংশোধনের বিষয়েও ঐকমত্য হয়।
আলী রীয়াজ জানান, “১৪১(ক)-এ অভ্যন্তরীণ গোলযোগ শব্দটি বাদ দিয়ে সেখানে আরও স্পষ্ট জাতীয় সংকটগুলোকে যুক্ত করার ব্যাপারে দলগুলো একমত হয়েছে।”
প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো:
‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দের পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ — এই শব্দগুলো সংযুক্ত হবে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে হবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা বা সংসদীয় উপনেতার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ সংলাপে অর্জিত এই ঐকমত্যকে “গঠনমূলক ও সময়োপযোগী অগ্রগতি” বলে উল্লেখ করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হলে তা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে।
সংলাপ চলবে আগামী সপ্তাহেও, যেখানে রাজনৈতিক অর্থনীতি, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয় উঠে আসবে বলে জানা গেছে।