রাজবাড়ীতে বিলুপ্তির পথে দেশীয় প্রজাতির মাছ, হুমকিতে নদী-খাল ও জনস্বাস্থ্য - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
জুলাই গণআন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায় আজ নিষিদ্ধ আওয়ামী কর্মীদের নাশকতা—বিভিন্ন স্থানে আগুন–বিস্ফোরণ ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ইবি শিক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিভাগ ও আন্তঃহল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন জাবিতে রাত ১০টার পর সব ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন নিষিদ্ধ জাবি ভর্তি আবেদন শুরু ২৩ নভেম্বর, চলবে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বালিয়াকান্দিতে আই ফাউন্ডেশনের চক্ষু ক্যাম্প, শতাধিক দরিদ্র রোগী পেলেন বিনামূল্যে চিকিৎসা স্বপ্ন, সংগ্রাম আর সাফল্যের গল্প—কুবির পাঁচ কৃতি শিক্ষার্থীর বিসিএস জয়যাত্রা বিবিসিতে শেখ হাসিনা অস্বীকার করলেন গণঅভ্যুত্থান হত্যা অভিযোগ জুলাই সনদে আইনি সিল, এক ঘোষণায় রাজনৈতিক অচলাবস্থা ভাঙলেন ইউনূস

রাজবাড়ীতে বিলুপ্তির পথে দেশীয় প্রজাতির মাছ, হুমকিতে নদী-খাল ও জনস্বাস্থ্য

মোঃ জাহিদুর রহিম মোল্লা, রাজবাড়ি প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫
  • ৯৮ বার দেখা হয়েছে

রাজবাড়ী জেলায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। এক সময় জেলার নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-জলাশয়ে দেশি মাছের প্রাচুর্য ছিল। বাজার থেকে শুরু করে গ্রামের বাড়ির পুকুর পর্যন্ত দেশি মাছের দেখা মিলত হরহামেশাই। তবে এখন পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গেছে। পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, পানি সংকট এবং অপরিকল্পিত মাছ ধরা ও অবকাঠামো নির্মাণের ফলে দেশীয় মাছ আজ বিলুপ্তির মুখে।

স্থানীয়রা জানালেন, এক সময় বাজারে পুটি, শিং, মাগুর, কৈ, টেংরা, টাকি, গুঁটি, শোল, গজার, বোয়াল, বাইম, চিংড়িসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ সহজলভ্য ছিল। এসব মাছ শুধু সুস্বাদুই ছিল না, বরং স্থানীয় নদী-খাল-বিল ও জলাশয়ের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। এখন এই পরিচিত মাছগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পের মতো হয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় মাছ হারিয়ে যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, খাল-বিল ভরাট, মা মাছ ধ্বংস, ফসলি জমিতে বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে ডোবা-পুকুর থেকে মাছ ধরা, বিদেশি রাক্ষুসে মাছের চাষ, কারেন্ট জালের অপব্যবহার, প্রাকৃতিক অভয়াশ্রম ধ্বংস, জলাশয় দূষণ এবং প্রজনন মৌসুমে মা মাছ ডিম ছাড়ার আগেই ধরা।

স্থানীয় মৎস্যচাষিরা জানান, দেশীয় মাছ সংরক্ষণের জন্য কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। মাছের উৎপাদন বাড়ানোর নামে পুকুরে অতিরিক্ত সার ও রাসায়নিক প্রয়োগ, বিদেশি মাছের চাষ এবং মা মাছ ধ্বংসের কারণে প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি মৎস্য বিভাগ থেকেও প্রয়োজনীয় নজরদারি ও উদ্যোগ না থাকায় দেশীয় মাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পরিতোষ সরকার বলেন, “আমরা ছোটবেলায় শোল, বোয়াল, গজার, বাইম ধরতাম। এখন তো এসব মাছ আর চোখেই পড়ে না। নদী-খাল ভরাট হওয়ায় মাছের বিচরণ ও প্রজননের জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে।”

স্থানীয় প্রবীণ ফিরোজ মোন্বার, মাছুদ মোন্বার, শশধর ঘোষ, নিখিল বসু, মোকাদ্দস মোল্লা, সরজিত সরকার, ফরহাদ হোসেন প্রমুখ জানান, “প্রজনন মৌসুমে নদী ও জলাশয়ে অভয়াশ্রম ঘোষণা, বর্ষাকালে দেশি পোনা মাছ ছাড়া এবং সচেতনতা বাড়ানো গেলে আবারও দেশি মাছের উৎপাদন ফিরিয়ে আনা সম্ভব।”

অন্যদিকে বাজারে এখন তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ, নাইলোটিকা, আফ্রিকান মাগুর, গ্রাস কার্প, সিলভার কার্পসহ বিদেশি মাছের আধিপত্য। অধিক লাভের আশায় অনেক চাষি দেশি মাছের বদলে হাইব্রিড ও বিদেশি মাছের চাষে ঝুঁকছেন। এতে দেশীয় মাছ হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাজারে ফরমালিন মিশ্রিত মাছের ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যে।

বাজারের মাছ বিক্রেতা শহিদ বিশ্বাস বলেন, “এখন বাজারে দেশি মাছ খুবই কম আসে। মূলত সারা বছর পাঙ্গাশ, রুই-কাতলা, তেলাপিয়া আর বিদেশি মাছ বিক্রি হচ্ছে। অনেক মাছ আবার বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। দীর্ঘক্ষণ তাজা রাখতে ব্যবহৃত হয় ফরমালিন, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।”

সচেতন মহলের দাবি, এখনই যদি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে আগামী প্রজন্ম দেশীয় মাছের নামই জানবে না। প্রয়োজন নদী-নালা খনন, জলাশয় সংরক্ষণ, মা মাছ রক্ষায় কঠোর আইন প্রণয়ন, প্রজনন মৌসুমে অভয়াশ্রম ঘোষণা এবং দেশীয় প্রজাতির মাছের চাষ বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ। প্রবীণ এলাকাবাসী আশা করছেন, তথ্য ও সচেতনতা বাড়ালে আবারও রাজবাড়ীর জলাশয়ে ফিরতে পারে হারিয়ে যাওয়া দেশীয় মাছের ঝাঁক।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT