নিউইয়র্ক প্রাইমারি নির্বাচনে প্রথম মুসলিম প্রার্থী হিসেবে জোহরান মামদানির জয় - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
ULAB এর ওয়ার্কশপে BUPGAC এর গঠনমূলক অংশগ্রহণ আত্রাইয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১১৩ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ব্লগার ফারাবির জামিন মঞ্জুর ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: ইউক্রেন যুদ্ধ না থামালে পুতিনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা যুদ্ধ বন্ধ না হলে সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য সাবেক আইজিপি মামুনের স্বীকারোক্তি: সেনানিবাসে কীভাবে আশ্রয় নিলেন ৩৭ বছর পর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিলেন দুই বাংলাদেশি সাঁতারু – সাগর ও হিমেল রাশিয়ার উপকূলে ৮.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতায় কাঁপছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশ যুক্তরাজ্যে বিমানে মুসলমান সেজে ‘জঙ্গী’ হবার চেষ্টা ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দুর! ডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর, ছয় কেন্দ্রে হবে ভোটগ্রহণ

নিউইয়র্ক প্রাইমারি নির্বাচনে প্রথম মুসলিম প্রার্থী হিসেবে জোহরান মামদানির জয়

মো: মাহমুদুন্নবী, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫
  • ৪৮ বার দেখা হয়েছে
mamdani_nyc_win

নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক মেয়র প্রাইমারিতে মুসলিম প্রার্থী জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক জয় মার্কিন প্রগতিশীল রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই জয় শুধু নিউ ইয়র্ক শহরের প্রশাসনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণেই নয়, বরং গোটা ডেমোক্রেটিক পার্টির আদর্শিক অবস্থান পুনর্বিন্যাসে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

প্রাইমারির ফলাফল বিশ্লেষণ

নিউ ইয়র্ক বোর্ড অফ ইলেকশনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক ফলাফলে দেখা গেছে, মামদানি পেয়েছেন মোট ভোটের ৬১.৮%, যেখানে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো, পেয়েছেন ৩৪.৯%। বাকি ভোট অন্যান্য ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে ভাগ হয়েছে। এই ব্যবধান ২৬.৯ শতাংশ পয়েন্ট, যা নিউ ইয়র্ক সিটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাইমারি বিজয়গুলোর একটি।

মামদানি জয়ের পর বলেন,

“এই বিজয় আমার একার না; এটা হাজারো ভাড়াটিয়া, শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও অভিবাসীর বিজয়—যারা প্রতিদিন বেঁচে থাকার লড়াই করে।”
(মামদানির প্রচারণা টিম, প্রেস ব্রিফিং, ২৫ জুন)

মামদানির জয়ে জাতীয় রাজনীতিতেও আলোড়ন

জোহরান মামদানি নিজেকে একজন “Democratic Socialist” হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন এবং নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে তাঁর আগের কার্যকাল থেকেই তিনি হাউজিং জাস্টিস, শ্রম অধিকার এবং ফ্রি পাবলিক ট্রান্সপোর্টের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছেন। তবে এবার তিনি প্রথমবারের মতো নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়লাভ করেন এমন এক সময়ে, যখন জাতীয় পর্যায়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি তাদের আদর্শিক পরিচয় নিয়ে সংকটে ভুগছে।

The Guardian-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:

“মামদানির জয় যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোর মধ্যে প্রগতিশীল আন্দোলনের শক্তি ও সংগঠনের সামর্থ্যকে প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে গাজা পরিস্থিতিতে তাঁর নির্ভীক অবস্থান তাকে তরুণ এবং মুসলিম ভোটারদের কাছে আদর্শনায়ক করে তুলেছে।” (The Guardian, ২৬ জুন ২০২৫)

মামদানির অন্যতম স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান ছিল গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরোধিতা। তিনি নিউ ইয়র্কে বিরল কয়েকজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির একজন, যিনি প্রকাশ্যে গাজায় সংঘটিত ঘটনাকে “গণহত্যা” (genocide) বলে অভিহিত করেছেন।

Associated Press-এর মতে,

“ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মূলধারায় যেখানে এখনও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন প্রবল, সেখানে মামদানির অবস্থান তাঁকে স্পষ্টভাবে একটি আলাদা ধারায় দাঁড় করিয়েছে। তবুও এই অবস্থান তাঁর জনপ্রিয়তায় ছেদ ফেলেনি—বরং ভোটারদের একাংশের মধ্যে তাকে আরও প্রভাবশালী করে তুলেছে।” (সূত্র: AP, ২৫ জুন ২০২৫)

ডেমোক্র্যাটদের জন্য নতুন সংকেত

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জন্য মামদানির জয় একাধিক বার্তা বহন করে। একদিকে, এটি প্রমাণ করে যে তরুণ, অভিবাসী, এবং মুসলিম ভোটারদের একীভূত করা সম্ভব, যদি প্রার্থী তাঁদের স্বার্থ ও চাহিদার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। অন্যদিকে, এটি মূলধারার দলীয় নেতৃত্বের কাছে এক সতর্কবার্তা—যে ভোটারদের মধ্যে একঘেয়েমি ও আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, সেটি কাটাতে হলে আরও সাহসী, নীতিনিষ্ঠ রাজনীতিকের প্রয়োজন।

TIME ম্যাগাজিন লিখেছে,

“Zohran Mamdani’s stunning win has upended the calculus of Democratic electoral strategy.” (TIME, ২৬ জুন ২০২৫)

মামদানির সামনে এখন অপেক্ষা করছে নভেম্বরের জেনারেল ইলেকশন, যেখানে তাঁর প্রতিপক্ষ হবেন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস (স্বতন্ত্র), রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লাইওয়া, এবং সম্ভবত আবারও কুয়োমো (স্বতন্ত্র হিসেবে)। যদিও নিউ ইয়র্ক একটি ডেমোক্র্যাট-প্রধান শহর, তবুও একটি স্প্লিট ভোট মামদানির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডঃ লরেন্স ব্লুম বলেন,

“যদি অ্যাডামস, কুয়োমো এবং মামদানি তিনজনেই নির্বাচনে থাকেন, তবে মুসলিম, ল্যাটিনো এবং ব্ল্যাক ভোটের বিভাজন মামদানির জয় নিশ্চিত করবে না। তবে, মামদানি যে হারে সংগঠিত ভোট সংগ্রহ করতে পেরেছেন, তা তাঁর শক্তিশালী শেকড়ের ইঙ্গিত দেয়।”
(নিউ ইয়র্ক পলিটিকাল ইনস্টিটিউট, নির্বাচন বিশ্লেষণ প্রতিবেদন, ২৫ জুন ২০২৫)

মামদানির জয় শুধু শুরু

জোহরান মামদানির প্রাইমারি জয় নিউ ইয়র্কের রাজনীতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে, এবং জাতীয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণে এক বড় সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, আদর্শিকভাবে স্পষ্ট ও জনমানুষের দাবি নিয়ে এগিয়ে আসা রাজনীতিকরা শুধুমাত্র “electable” নন, বরং তারা জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিতেও প্রস্তুত।

নভেম্বরের মূল নির্বাচনে তাঁর জয় কতটা নিশ্চিত হবে, তা নির্ভর করছে শহরের ভোটাররা প্রগতিশীল রাজনীতির দিকে ধাবিত হয় কিনা—নাকি মধ্যমপন্থীদের নিরাপত্তার আশ্বাসে ফিরে যায়।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT