মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:

মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
  • ১২ বার দেখা হয়েছে

গোপন মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলা দেশটির পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করতে পারেনি। বরং এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম কিছুটা পিছিয়েছে মাত্র কয়েক মাসের জন্য। অথচ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসন এই হামলাকে ‘পুরোপুরি ধ্বংস’ বলে প্রচার করে আসছিলেন।

মার্কিন ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ)-এর একটি গোপন প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য জানায়, গত সপ্তাহান্তে বি-২ বোমারু বিমান থেকে ছোড়া ভয়াবহ ৩০,০০০ পাউন্ডের ১৪টি জিবিইউ-৫৭ বাংকার-বাস্টার বোমা এবং টমাহক ক্রুজ মিসাইল হামলায় ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর প্রবেশপথ ধ্বংস হলেও ভূগর্ভস্থ মূল ভবন এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ যন্ত্রপাতি বা সেন্ট্রিফিউজ পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি।

নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ, ইসফাহান এবং ফোর্ডো পরমাণু স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে সব সেন্ট্রিফিউজ ধ্বংস হয়নি এবং ইরানের হাতে এখনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। নিজের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে তিনি লিখেন, “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস!” তিনি সংবাদমাধ্যমের এই প্রতিবেদনকে ‘ট্রাম্পকে হেয় করার ষড়যন্ত্র’ বলেও অভিহিত করেন। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট স্বীকার করেন, প্রতিবেদনটি সত্য তবে ‘সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা’ এবং ‘টপ সিক্রেট’ হওয়া সত্ত্বেও কে বা কারা তা ফাঁস করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভেন উইটকফ ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফোর্ডো — তিনটি স্থাপনাতেই সেন্ট্রিফিউজের বেশিরভাগ, যদি না সব, ধ্বংস করা হয়েছে।’ তবে শীর্ষ মার্কিন সেনা কর্মকর্তা জেনারেল ড্যান কেইন কিছুটা সতর্ক সুরে বলেছেন, ‘এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় খুব গুরুতর ক্ষতি হয়েছে।’

এদিকে ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামী মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানান, ‘আমরা আগে থেকেই বিকল্প প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। পারমাণবিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির এক উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের হাতে এখনও পর্যাপ্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে। খেলা এখানেই শেষ নয়।’

ইসরায়েল গত ১৩ জুন থেকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, বিজ্ঞানী এবং সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের টার্গেট করে নজিরবিহীন বিমান হামলা চালিয়েছে। এই অভিযানকে ঘিরে কয়েক সপ্তাহ ধরে কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প সামরিক পথ বেছে নেন।

মার্কিন সেনাবাহিনীর দাবি, এই বিশাল অভিযানে ১২৫টিরও বেশি মার্কিন যুদ্ধবিমান, স্টিলথ বোমারু, ফাইটার জেট, আকাশে জ্বালানি সরবরাহকারী ট্যাংকার, গাইডেড মিসাইল সাবমেরিন এবং গোয়েন্দা নজরদারি বিমান অংশ নেয়।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। তবে ইসরায়েল মঙ্গলবার বিয়ারশেবা শহরে একটি রাডার স্টেশন ধ্বংস করেছে এবং ইরান সে সময় কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। এতে চারজন ইসরায়েলি নিহত হন।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও দুই পক্ষই পরস্পরকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এই সংঘর্ষে ইরানে অন্তত ৬১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ইসরায়েল বলছে, তাদের ২৮ জন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক মহল এই যুদ্ধবিরতিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। নেদারল্যান্ডসে ন্যাটো সম্মেলনের আগে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই দ্রুত সব শান্ত হোক।’ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানান এবং এটিকে স্থায়ী করার আহ্বান জানান। একই মত প্রকাশ করেছে রাশিয়া ও জার্মানি।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT