ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি নিয়ে ধোঁয়াশা, ইরানের শর্ত: আগ্রাসন বন্ধ না হলে হামলা চলবে। ইসরায়েল পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি স্পষ্ট জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে কোনও যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়নি। তবে তেহরান জানিয়েছে, ইসরায়েল যদি তাদের কথিত “অবৈধ আগ্রাসন” ২৪ জুন ভোর ৪টার (তেহরান সময়) আগে বন্ধ করে, তাহলে ইরানও হামলা বন্ধ রাখবে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ইসরায়েল ও ইরান ১২ দিনের সংঘাত বন্ধে একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধাপে ধাপে শান্তি কার্যকর হবে। তবে ট্রাম্পের ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই ইরান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে। সামাজিক মাধ্যমে আব্বাস আরাঘচি লেখেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনও যুদ্ধবিরতি বা সামরিক অভিযানের সমাপ্তির বিষয়ে চুক্তি হয়নি।’
এদিকে রবিবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার জবাবে ইরান কাতারের আল-উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। মার্কিন ও কাতার বাহিনী জানিয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথেই ধ্বংস করা হয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে।
ইরান জানিয়েছে, ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৪০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জন শিশু রয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ৩ হাজার ৫৬ জন। অন্যদিকে, ইরানি হামলায় ইসরায়েলে প্রাণ গেছে ২৪ জনের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং জ্বালানিবাজারে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ইসরায়েল এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও মন্তব্য করেনি। ফলে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
সাম্প্রতিক এই সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে সেনা অবস্থান, জ্বালানি পরিবহন এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা তীব্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরান জানিয়েছে, তারা ‘আক্রমণ প্রতিরোধের অধিকার সংরক্ষণ করে’। তবে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা এখনও বাতিল হয়নি বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে এই সংঘাতের প্রভাব পড়ছে তেলের দামে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানির দাম বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। বাংলাদেশের তেল আমদানি ও বাজার পরিস্থিতি নিয়েও নতুন করে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে উপসাগরে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
উপসাগরীয় দেশগুলোর সেনা ঘাঁটিগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে। রিয়াদ, আবুধাবি ও দোহা সবকিছু সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, কাতারে তাদের সেনাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
বিশ্ব রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-ইসরায়েল সরাসরি সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্য একদম পাল্টে দিতে পারে। আর এই পরিস্থিতির পরিণতি পুরো দক্ষিণ এশিয়া এবং বাংলাদেশেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।