বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন ভারতীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। শুল্ক তুলে নিলেও বাংলাদেশে পেঁয়াজ ঢুকতে না পারায় ভারতে মজুত বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। এ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ।
ভারতের ব্যবসায়ী ও কৃষকরা রপ্তানি বন্ধের জন্য মোদি সরকারের পররাষ্ট্রনীতি, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ও রিপাবলিক বাংলার সাংবাদিক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, ময়ূখের মিথ্যা প্রচারণার কারণে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষুব্ধ কৃষকরা ময়ূখ রঞ্জনের বাড়ি ঘেরাও করে আলু-পেঁয়াজ ফেলে বিক্ষোভ করেছেন বলেও জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, কৃষকদের এ সংকটের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের ভুল সিদ্ধান্ত ও মিডিয়ার উসকানিমূলক ভূমিকা দায়ী। গুজব ও অপপ্রচারের মধ্যেও বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। কারণ, দেশটি সময়মতো বিকল্প উৎস থেকে পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করেছে।
গত ডিসেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে বাংলাদেশ আমদানি বন্ধ করে দেয়। এরপর চলতি বছর মার্চে ভারত রপ্তানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে ১ এপ্রিল থেকে বিনা শুল্কে রপ্তানির সুযোগ দেয়। তবুও বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে আমদানিকারকদের অনেকে বলছেন, তারা আর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবেন না। যদি আমদানির প্রয়োজন হয়, তাহলে পাকিস্তান বা মিসরের মতো দেশ থেকে করার কথা ভাবছেন তারা। অন্যদিকে কিছু ব্যবসায়ী বলছেন, শুল্কমুক্ত সুযোগ কাজে লাগালে দেশে দাম স্থিতিশীল রাখা সম্ভব।
বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৩৫–৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যেখানে কয়েকদিন আগেও তা ছিল ২৭–৩৩ টাকা। ব্যবসায়ীদের মতে, মান ও দামে এগিয়ে থাকায় হালি পেঁয়াজ দেশের বাজার দখল করে নিচ্ছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশিকুর রহমান জানান, এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে প্রায় ৩৮ টাকা। ফলে এখনকার বাজারদর কৃষক ও ক্রেতা—উভয়ের জন্যই সহনীয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৮ লাখ ২১ হাজার টন। তবে চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হবে বলে ধারণা কর্মকর্তাদের।
পেঁয়াজের সঞ্চয় ব্যবস্থায় মনোযোগ দিলে বছরের শেষ দিকে আর আমদানির প্রয়োজন পড়বে না বলে মত দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান। তার মতে, প্রয়োজনে পাকিস্তান বা মিসর থেকে আমদানির বিকল্প ভাবা যেতে পারে।
ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, “ভারত নিজের স্বার্থে শুল্ক কমিয়েছে। আমাদের উচিত কৃষকদের স্বার্থে ভারতীয় আমদানি নিরুৎসাহিত করা। দেশি উৎপাদন ভালো থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং কৃষকরাও লাভবান হবেন।”
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ বছর পেঁয়াজের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, মান ও সরবরাহের উপর নির্ভর করে বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমলে কৃষকরাও আশাবাদী হয়ে উঠবেন।