সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলোচিত দুই শিক্ষককে হত্যার হুমকিদাতা শিক্ষার্থী সাহারা চৌধুরীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশের ১৬২ নাগরিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সম্প্রতি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন এবং মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার আসিফ মাহতাব উৎসকে প্রকাশ্যে খুনের হুমকি দেন ওই শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হওয়ার পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারই প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন ড. সামিনা লুৎফা, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আইনজীবী মানজুর আল মতিনসহ ১৬২ নাগরিক।
আজ (১৬ আগস্ট) গণমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে নাগরিকরা বলেন, “খবরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১১ আগস্ট রাতে ‘অ্যান্টার্কটিকা চৌধুরী’ নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে দুটি ক্যারিকেচার পোস্ট করা হয়। ওই ক্যারিকেচারে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎসর ছবি ব্যবহার করা হয়।”
“পোস্ট দেওয়ার পর ড. সরোয়ার এবং আসিফ মাহতাব দাবি করেন যে একাউন্টটি সাহারা চৌধুরীর, এবং তার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দেন। তারা আরও অভিযোগ করেন যে তারা মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন।”
বিবৃতিতে বলা হয়, এর প্রতিক্রিয়ায় সাহারা চৌধুরীও ড. সরোয়ার, আসিফ মাহতাব ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন, যেখানে তিনি হুমকি ও নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
নাগরিকরা বলেন, “আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে দীর্ঘদিন ধরে ড. সরোয়ার ও আসিফ মাহতাবের নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী ভিন্ন লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে আসছে। এর ফলে এ ধরনের মানুষ বারবার সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, অপমান ও নির্যাতনের মুখে পড়ছেন। তাঁরা শিক্ষকের অবস্থানকে ব্যবহার করেছেন সমাজে বিভাজন ও ঘৃণা ছড়ানোর কাজে।”
তারা সাহারা চৌধুরীর বহিষ্কারাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং তাকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে ভিন্ন পরিচয়ের মানুষের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার দাবি জানান তারা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রান্তিক ও ‘লিঙ্গ সংখ্যালঘুদের’ সাংবিধানিক পরিচয়ের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বৈচিত্র্য রক্ষা ও অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি জেন্ডার-সেনসিটিভ আচরণবিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
নাগরিকরা আরও দাবি করেন, সমাজে ‘বিভাজন ও ঘৃণা ছড়ানো’ এবং বারবার ‘অসংবেদনশীল আচরণের’ জন্য আসিফ মাহতাব ও ড. সরোয়ারকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
বিবৃতিতে সই করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, লেখক ও যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আজফার হোসেন, আইনজীবী মানজুর আল মতিন, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিউতি সবুর, গবেষক নাসরিন খন্দকার, আইনজীবী আবেদা গুলরুখ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাভিন মুরশিদ, শিক্ষক মানস চৌধুরী, গবেষক রোকাইয়া শতদ্রু, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মিম আরাফাত মানব, গবেষক ও শিল্পী তারাহুম, বিপণনকর্মী দেবযানী মোদক, উন্নয়ন কর্মী মো. আবু রায়হান, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষার্থী ও অ্যাকটিভিস্ট যারীন ফারিহা, যোগাযোগ কর্মকর্তা আফিয়া জাহিন, শিল্পী ও গবেষক অরূপ রাহী, প্রকাশনা ও থিয়েটারকর্মী নাজিফা তাসনিম খানম তিশা, গণিতবিদ নাফিসা রায়হানা, উন্নয়নকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট আমিনা সুলতানা সোনিয়া, উন্নয়নকর্মী ও গবেষক নুসরাত খান, শিক্ষক মিথিলা মাহফুজ, সাংবাদিক তুষা বড়ুয়া, স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মী সাকি ফারজানা, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক লাবনী আশরাফি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজলী সেহরীন ইসলাম, শিক্ষার্থী ফাহিম আলম, চাকরিজীবী রেক্সোনা পারভীন প্রমুখ।