নোটিশ:
শিরোনামঃ
সরাসরি ট্রেন চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ: লালমনিরহাটে আন্দোলন তীব্র উপদেষ্টাদের এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক ইরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: নিহত ৪০, আহত ১২০০, নেপথ্যে ইসরায়েল জাবিতে হামলার ঘটনায় ২৫৯ ছাত্রলীগ কর্মী বহিষ্কার, ৯ শিক্ষক বরখাস্ত আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন কৌশল: ‘মব’ সৃষ্টি করে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আধিপত্য আল-জাজিরাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানালেন, বাংলাদেশে ‘দ্বিতীয় ’স্বাধীনতার পর দেশ গঠনের দায়িত্বে আছেন আল-জাজিরায় ড. ইউনূস: শেখ হাসিনাকে থামাতে পারবেন না মোদি মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি যুবক নিহত ফ্রান্সে মসজিদে হামলা, নামাজরত মুসল্লিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা ঢাবি শিক্ষার্থীর লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে ক্লাসে যাওয়ার দাবিতে প্রতীকী অনশন

২০২৪ এ বাংলাদেশ ২.০

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১১২ বার দেখা হয়েছে
বাংলাদেশ ২০২৪

বাংলাদেশে ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন পর্বের সূচনা করেছে। ছাত্ররা সরকারের দমন-পীড়ন এবং গণতন্ত্রের সংকটের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে। এই আন্দোলন শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর প্রভাব ফেলেনি, বরং আন্তর্জাতিক মহলেও তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

আন্দোলনের সূচনা ও একঝাঁক তরুণ নেতৃত্ব

বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরে শিক্ষার্থীরা মূলতঃ চাকরীতে কোটা সংস্কার আন্দোলন আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও সাধারণ জনগণ  শিক্ষাব্যবস্থার দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, এবং সরকারের অব্যাহত নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। এই আন্দোলন শুরুর সময় থেকে ছাত্রদের মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব তৈরি হয়, যারা ধীরে ধীরে আন্দোলনকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে, ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে সড়ক অবরোধ এবং সরকারি দফতরের সামনে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।

সরকারের প্রতিক্রিয়া: দমন-পীড়ন ও পুলিশি হস্তক্ষেপ

শেখ হাসিনার সরকার প্রথমদিকে ছাত্র আন্দোলন দমন করতে ব্যাপক পুলিশি বাহিনী এবং র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (RAB) মোতায়েন করে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রচার করা হয় যে, আন্দোলনকারীরা দেশের অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। তবুও, আন্দোলনকারীরা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যায়, এবং সহিংসতার মধ্যে হলেও তাদের দাবি পূরণের জন্য লড়াই চালিয়ে যায়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই আন্দোলন ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। “হিউম্যান রাইটস ওয়াচ” এবং “অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল” সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সরকারকে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে এবং আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতির সাথে আচরণ করার আহ্বান জানায়। বিশেষ করে, আন্দোলনকারীদের আটক এবং তাদের উপর সহিংসতার অভিযোগ আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত পৌঁছায়।

বিরোধী দলগুলোর ভূমিকা

আওয়ামী লীগের বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী, আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানায় এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনকে তাদের রাজনীতি ও ক্ষমতায় ফেরার সুযোগ হিসেবে দেখার চেষ্টা করে। তবে, তাদের এই রাজনৈতিক আগ্রহ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যকে কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে একযোগে আন্দোলনকারীরা সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর সমাবেশ এবং প্রতিবাদ আয়োজনে সক্রিয় হয়ে ওঠে।

দেশের অর্থনৈতিক সংকট: সরকারের পতনের কারণ

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটপূর্ণ হয়ে পড়ে। বৈদেশিক ঋণ, বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের রপ্তানি কমে যাওয়া এবং অভ্যন্তরীণ শিল্পের মন্দার ফলে সাধারণ মানুষকে দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়। মূল্যস্ফীতি, খাবারের দাম বৃদ্ধি এবং বেকারত্বের কারণে দেশের জনগণ সরকারকে দায়ী করে এবং এর ফলস্বরূপ ছাত্র আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। আন্দোলনকারীরা সরকারের দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে।

গণমাধ্যমের ভূমিকা: সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রচারের শক্তি

আন্দোলনের প্রথম থেকেই সামাজিক গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। টুইটার, ফেসবুক, এবং ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবি এবং সরকারের অমানবিক আচরণের প্রতিবাদ জানায়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের বিষয়েও বিভিন্ন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, যার ফলে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

নতুন নেতৃত্বের উত্থান

ছাত্র আন্দোলন ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গসংগঠন হিসেবে, তবে এই আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন ধরনের নেতৃত্বের উত্থান ঘটে। তরুণ ছাত্র-নেতারা আন্দোলনের পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠে এবং দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে তারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে। বিশেষভাবে আন্দোলনকারীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তা শুরু করেছে, যার মাধ্যমে শেখ হাসিনার দীর্ঘ দিনের শাসনের অবসান ঘটেছে।

বাংলাদেশে এই আন্দোলন শুধু সরকারের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে একটি সামাজিক পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে। শাসক দলকে নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে, এবং নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ আন্দোলনের মাধ্যমে যে মেসেজটি প্রেরিত হয়েছে, তা হল – দেশের জনগণের দাবি ও অধিকারকে অগ্রাহ্য করলে, তাদের বিরুদ্ধে একত্রিত প্রতিরোধ সৃষ্টি হবে।

  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT