নোটিশ:
শিরোনামঃ
ইউরোপে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয় সরাসরি ট্রেন চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ: লালমনিরহাটে আন্দোলন তীব্র উপদেষ্টাদের এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক ইরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: নিহত ৪০, আহত ১২০০, নেপথ্যে ইসরায়েল জাবিতে হামলার ঘটনায় ২৫৯ ছাত্রলীগ কর্মী বহিষ্কার, ৯ শিক্ষক বরখাস্ত আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন কৌশল: ‘মব’ সৃষ্টি করে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আধিপত্য আল-জাজিরাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানালেন, বাংলাদেশে ‘দ্বিতীয় ’স্বাধীনতার পর দেশ গঠনের দায়িত্বে আছেন আল-জাজিরায় ড. ইউনূস: শেখ হাসিনাকে থামাতে পারবেন না মোদি মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি যুবক নিহত ফ্রান্সে মসজিদে হামলা, নামাজরত মুসল্লিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

স্টারলিংক বাংলাদেশ আনার ব্যাপারে কাজ করছে বিটিআরসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১০৩ বার দেখা হয়েছে
স্টারলিংক বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে কাজ করছে বিটিআরসি
স্টারলিংক বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে কাজ করছে বিটিআরসি

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মো. এমদাদ উল বারী সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে বিটিআরসি বিশ্বের অন্যতম ধনী ও প্রভাবশালী প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের স্টারলিংক সেবার সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে।  এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে দ্রুতগতির স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা দেশের ডিজিটাল রূপান্তরের প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

স্টারলিংক সেবা নিয়ে আলোচনা

রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে টাস্কফোর্স কর্তৃক প্রস্তাবিত সুপারিশমালা’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান এই মন্তব্য করেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এই সম্মেলনের প্রথম দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘ডিজিটাল রূপান্তর এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের (এসএমই) উন্নয়নের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।

এ সময় মো. এমদাদ উল বারী বলেন, “ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীদের একাধিক ধাপ অতিক্রম করতে হয় এবং প্রতিটি ধাপেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ কেটে নেওয়া হয়। ইন্টারনেটের উচ্চমূল্যের পেছনে এটি একটি বড় কারণ। স্টারলিংক সেবা চালু হলে এই চক্র ভাঙার সম্ভাবনা রয়েছে এবং গ্রাহকরা আরও সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পেতে পারেন।”

স্টারলিংক বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে কাজ করছে বিটিআরসি

স্টারলিংক বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে কাজ করছে বিটিআরসি

ইলন মাস্কের কাছে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ

অন্তবর্তী সরকার প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ইলন মাস্ককে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি দেন, যেখানে তিনি বাংলাদেশে স্টারলিংক সেবার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। চিঠিতে মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে সেবা চালুর প্রস্তাবও দেওয়া হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “বাংলাদেশ একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ এবং আমাদের টেলিযোগাযোগ খাত ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে কাজ করছে। স্টারলিংক সেবা যুক্ত হলে আমাদের গ্রামীণ ও দূরবর্তী এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।”

স্টারলিংক এর সেবা নিয়ে বিটিআরসি’র নিয়ন্ত্রক চ্যালেঞ্জ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জটিলতা

বিটিআরসি চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন যে বিটিআরসি’কে একসময় স্বাধীন সংস্থা হিসেবে গঠন করা হলেও পরবর্তীতে আইন সংশোধনের মাধ্যমে এটি মন্ত্রণালয়ের অনুমতির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “নিয়ন্ত্রক সংস্থাই এখন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সমন্বয়ের অভাবে অনেক উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে না।”

বক্তারা উল্লেখ করেন, ইন্টারনেট সেবার খরচের বড় অংশই কর হিসেবে সরকারের কোষাগারে চলে যায়। ফলে, যদি সরকার করের হার না কমায়, তাহলে ইন্টারনেটের দাম কমানো সম্ভব হবে না এবং ডিজিটাল প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হতে পারে।

স্টারলিংক সেবার খরচ ও সামর্থ্য

স্টারলিংক সেবা চালুর জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার খরচ প্রায় ৬৫,৯৫৯ টাকা ($৫৯৯) এবং মাসিক সেবা ফি প্রায় ১৩,২১৩ টাকা ($১২০)। এর বিপরীতে, বাংলাদেশে স্থানীয় ব্রডব্যান্ড সেবা মাত্র ৫০০ টাকায় ৫ এমবিপিএস গতি এবং মোবাইল ইন্টারনেট ৩০ জিবি ডেটা ৪০০-৫০০ টাকায় সরবরাহ করে।

স্থানীয় ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সমিতি (আইএসপিএবি) সভাপতি মো. এমদাদুল হক প্রশ্ন করেন, “যখন স্থানীয় প্রদানকারীরা দেশের প্রায় সর্বত্র সেবা পৌঁছে দিচ্ছে, তখন স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা কতটা?”

গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট প্রবাহের সম্ভাবনা

যদিও স্টারলিংক সেবার খরচ বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের জন্য বেশি বলে মনে করা হচ্ছে, তবুও গ্রামীণ এলাকায় উচ্চগতির ইন্টারনেটের চাহিদা প্রচুর। স্টারলিংক সেবা চালু হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, গ্রামীণ স্কুল এবং এমনকি সুন্দরবনের মতো দূরবর্তী স্থানেও ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে।

বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, “স্টারলিংক সেবা কার্যকর থাকলে গত বছরের ইন্টারনেট অবরোধগুলো কম বিঘ্নিত হত।”

বিটিআরসি’র লাইসেন্সিং নির্দেশিকা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিটিআরসির উপ-পরিচালক (মিডিয়া ও প্রকাশনা) জাকির হোসেন খান জানান, এনজিএসও স্যাটেলাইট সার্ভিস অপারেটর লাইসেন্স নির্দেশিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। লাইসেন্সের মেয়াদ পাঁচ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ১০০% বিদেশি বিনিয়োগ বা যৌথ উদ্যোগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বিটিআরসির খসড়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, “রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস” এর অধীনে নিবন্ধিত একক মালিকানা, অংশীদারিত্ব এবং কোম্পানিগুলি বাংলাদেশে এনজিএসও স্যাটেলাইট সিস্টেম এবং সেবা নির্মাণ, মালিকানা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনার জন্য আবেদন করতে পারবে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের জটিলতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বিটিআরসি চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেন, “মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে স্টারলিংক সেবা নিয়ে কিছু অগ্রগতি দেখা যাবে।” তবে, সেবা চালুর আগে নিয়ন্ত্রক ও প্রযুক্তিগত বিষয় নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। বিটিআরসির কর্মকর্তারা স্থানীয় নিরাপত্তা ও নজরদারি আইন মেনে চলার বিষয়ে স্টারলিংকসহ অন্যান্য স্যাটেলাইট সেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছেন।

বাংলাদেশে স্টারলিংক সেবা চালু হলে দেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। বিশেষ করে গ্রামীণ ও দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানোর মাধ্যমে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে। তবে, সেবার মূল্য এবং স্থানীয় সেবা প্রদানকারীদের উদ্বেগ সমাধানে প্রয়োজন হবে সুদূরপ্রসারী ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT