সৌদি আরবে অপ্রত্যাশিত টানা ভারী বর্ষণ ও বন্যা জনজীবনে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। মক্কা ও মদিনা সহ দেশের বিভিন্ন শহরের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। গাড়ি ভেসে যাওয়া থেকে শুরু করে ভবন প্লাবিত হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এই অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।
মঙ্গলবার জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র (এনসিএম) মক্কা এবং মদিনার পাশাপাশি পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় “রেড এলার্ট জারি করেছে। এই সতর্কতা দেশের ইতিহাসে অন্যতম সর্বোচ্চ সতর্কতাগুলোর মধ্যে একটি। এছাড়া রিয়াদ, আসির এবং জাজানের মতো অঞ্চলে “অরেঞ্জ সতর্কতা” দেওয়া হয়েছে। জনগণকে অনুরোধ করা হয়েছে ঘর থেকে বের না হতে এবং নিরাপত্তা নির্দেশনা মেনে চলতে।
পরিবেশ, পানি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মক্কার বদর অঞ্চলের আল-শাফিয়াহ এলাকায় সর্বোচ্চ ৪৯.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মদিনার কেন্দ্রীয় হারাম এলাকায় ৩৬.১ মিলিমিটার এবং জেদ্দার আল-বসাতিনে ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কুবা মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ২৮.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সৌদি রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষ এবং সিভিল ডিফেন্স এই বন্যা মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মক্কা অঞ্চলে ১,৪২০ জন কর্মী, ১৪৯টি উদ্ধারযান এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা সক্রিয় করা হয়েছে। সিভিল ডিফেন্স জনগণকে নদীর উপত্যকা, নিচু জমি এবং জলাবদ্ধ এলাকাগুলো থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
জেদ্দা শহরে বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ১১টি মিউনিসিপালিটি এবং ১৫টি সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে ৪,০৩২ জন কর্মী এবং ১,৮১১টি যন্ত্রপাতি কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। বৃষ্টির পানি অপসারণ এবং যানবাহনের চলাচল নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
সোমবার রাবিঘ শহরে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রেকর্ড করা হয়েছে। এটি উপকূল পর্যন্ত পৌঁছে সমুদ্রের ঢেউ বাড়িয়ে দেয়। এনসিএম জানিয়েছে, এটি সৌদি আরবের ইতিহাসে অন্যতম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় । এই ঘূর্ণিঝড় কারণ বিশ্লেষণ এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালানো হবে।
জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যাত্রীদের তাদের ফ্লাইটের সময়সূচি যাচাই করতে বলেছে। মক্কা অঞ্চলে আল-মুহাম্মাদিয়া পাস ভারী বর্ষণ ও পাথরধসের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এনসিএম সতর্ক করেছে যে জাজান এবং এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে প্রবল বৃষ্টি, বজ্রঝড় এবং শিলাবৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। জেদ্দার সতর্কতার মাত্রা “রেড” থেকে অরেঞ্জ”-তে নামানো হলেও পরিস্থিতি এখনো বিপজ্জনক।
সৌদি কর্তৃপক্ষ সবাইকে আবহাওয়ার সতর্কতা মেনে চলতে, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও জলাবদ্ধ এলাকাগুলো এড়িয়ে চলতে এবং জরুরি প্রয়োজনে ৯৪০ বা ৯৯৭ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেছে।
মক্কা ও মদিনা সহ অন্যান্য অঞ্চলে বৃষ্টিপাত, ঝড়ো হাওয়া, এবং হাইওয়ের পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনা আরও কয়েকদিন চলতে পারে। জনসাধারণকে সাবধানতা অবলম্বন করতে এবং বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
সৌদি আরবে এমন বিরূপ আবহাওয়া ও বন্যা পরিস্থিতি সাম্প্রতিক সময়ে বিরল। জনগণের সহযোগিতা এবং জরুরি সেবা বিভাগের তৎপরতায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply