বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘জুলাই বিপ্লব’ ঘোষণাপত্র প্রকাশ অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার রাতে রাজধানীর বাংলা মোটরের রূপায়ন সেন্টারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
যদিও ঘোষণাপত্র প্রকাশ অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে, তবে পূর্বঘোষিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ আয়োজন করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় শহীদ মিনারে সমাবেশ হবে। সেখানে তাঁরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে প্রস্তাবনা তুলে ধরবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে পোস্ট করে বলা হয়েছে, “আজ ৩১ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় শহীদ মিনারে দেখা হচ্ছে। ঢাকায় আসুন ছাত্র-জনতা।”
ঘোষণাপত্র প্রকাশের পেছনের পরিস্থিতি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রাখতে ঘোষণাপত্র প্রণয়নের কথা আগে থেকেই জানিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই ঘোষণাপত্রে গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, ঐক্যের ভিত্তি, এবং রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরা হবে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে। তবে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঘোষণাপত্র প্রকাশে বিলম্ব করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, “জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হবে, যাতে সব পক্ষের মতামত অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও ঐক্যের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠবে।”
সোমবারের সভার পর রাতের বিক্ষোভ
সোমবার মধ্যরাতে বাংলা মোটর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর আগে আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ সাংবাদিকদের জানান, “৫ আগস্টের মতো আজ মঙ্গলবারও ছাত্র-জনতাকে রাজপথে নামার আহ্বান জানানো হচ্ছে।”
ট্রাফিক নির্দেশনা
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) শহীদ মিনারে আজকের সমাবেশ ঘিরে যানজট এড়াতে বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা জারি করেছে:
- গাবতলী থেকে আগত যানবাহন মানিক মিয়া এভিনিউ এবং আগারগাঁওয়ের পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে পার্কিং করবে।
- সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী দিয়ে আসা যানবাহন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে পার্কিং করবে।
- আব্দুল্লাহপুর দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করা যানবাহন ৩০০ ফিট এলাকায় পার্কিং করবে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া
‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
- বিএনপি বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
- ছাত্রদল এই উদ্যোগকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছে।
- বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী এটিকে অভ্যুত্থানকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের প্রচেষ্টা বলে সমালোচনা করেছে।
- জামায়াত ও ছাত্রশিবির এই কর্মসূচিতে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে।
শহীদ মিনারে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি
সমাবেশে শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহত যোদ্ধাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ জন সমন্বয়ক শপথ গ্রহণ করবেন এবং ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ দাবি উত্থাপন করা হবে।
ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ অভিযোগ করেছেন, “জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রকে ঘিরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। তবে আমরা জনগণের ঐক্য ও চেতনার ভিত্তিতে এ আন্দোলন এগিয়ে নেব।”
সমাবেশটি শহীদ মিনারে পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক অঙ্গনের ভিন্নমতের মধ্যেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার জানিয়েছে।
Leave a Reply